ইলমা, অবন্তি, লিমু। এদের বয়স চার থেকে ১৫/১৬ বছর। কারো মা নেই, কারো নেই বাবা। আবার কেউ হারিয়েছেন মা-বাবা দুজনকেই। যে বয়সে মায়ের কোলে থাকার কথা সেই বয়সে তারা এতিমখানায় অপরিচিত কিছু মানুষের স্নেহে বেড়ে উঠছেন মাতৃ-মমতায়।
বাবা-মা হারানো এসব এতিম শিশুদের এবারো ইফতার আয়োজন ও ঈদের নতুন পোশাক তুলে দিয়েছেন সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি-৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বসে প্লেটভরা হরেক পদের ইফতার ও ঈদের নতুন জামা পেয়ে এসব এতিম শিশুদের চোখেমুখে ছিল অনাবিল আনন্দ। ঈদের নতুম জামা পেয়ে অনেকেই খুশিতে নেচে ওঠে।
শুক্রবার রাজধানীর পুরান ঢাকার কাঠেরপুল এলাকায় ড্রিম২০ রেস্টেুরেন্টে বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্র ‘বারাকা’র প্রায় অর্ধশত শিশুকে নিয়ে এ আয়োজনে সেন্ট গ্রেগরিজের সাবেক শিক্ষক-ছাত্ররাও উপস্থিত ছিলেন।
যেসব এতিম শিশু এসেছিল তার মধ্যে একজনের নাম লিমন। চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ইফতারে এসে কেমন লাগছে, জানতে চাইলে লিমনের অভিব্যক্তি-খুবই ভালো।
বরিশালের গৌরনদীর মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে ২০১৬ সালে ঢাকার সদরঘাটে আসে লিমন। পরে তার ঠাঁই হয় বারাকায়। সেখান থেকে টাইলসের কাজ করে লিমন। তবে যোগাযোগ হয় বাড়িতে।
ঈদে বাড়ি যাবে না, প্রশ্নে লিমনের উত্তর-এখানে অনেক বাচ্চা আছে, তাদের কারো মা-বাবা নেই। তাদের ছেড়ে কেমনে যামু। বাড়িতে যেতে ভালো লাগতেছে না।
টাঙ্গাইলের মো. শ্যামলের (১৫) বাবা মারা যাওয়ার এক মাস পর মাও মারা যায়। ঢাকায় ভবঘুরের মতো ঘুরতে ঘুরতে তার স্থান হয় বারাকায়। এখানে থেকে সে মুদি দোকানে কাজ করে। ইফতার করতে এসে তারও ভালো লাগছে বলে জানান।
৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আরও উপস্থিত ছিলেন বারাকার প্রোগ্রাম অফিসার এ্যান্থনী প্রিন্স গমেজ, ফিল্ড অফিসার শাহীনূর খাতুন ও সাইক্লোজিস্ট মারিয়া জামান।
এবারের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের সাবেক শিক্ষক আবুল কাশেম। তিনি বর্তমানে বারাকা চিলড্রেন ডিআইসি ও নাইট শেল্টারের ইনচার্জ। তিনি বলেন, এতিম শিশুদের নিয়ে গ্রেগরিজের ছাত্ররা যে আয়োজন করেছে তার প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। এ ধরনের উদ্যোগ শিক্ষক হিসেবে আমার বুক গর্বে ভরে যায়।
গ্রেগরিজের ৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিবছর তারা এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার ও নতুন জামা বিতরণের আয়োজন করে থাকেন। এ আয়োজনে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই