বগুড়া শহরে যানজট নিরসনে মাঠে নামছে জেলা প্রশাসন। অপ্রতুল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ২০ হাজার রিকশা। যানজট নিয়ন্ত্রণে এসব রিকশা একমুখী সড়ক করে দিয়ে মূল শহরে চলাচল করবে ব্যাটারি চালিত ৬ আসন বিশিষ্ট ইজিবাইক। আর মূল শহরে কোনও রিকশা চলাচল করবে না। এজন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে ২ হাজার ইজিবাইককে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে।
বগুড়া জেলা শহরের দীর্ঘদিনেও হয়নি সড়ক সম্প্রসারণ। অল্প বিস্তর সড়কের জন্য প্রতিদিনই মূল শহরে যানজট লেগে থেকে। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে অতিরিক্ত সময় ব্যায় হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে মূল শহরের মধ্যে রেললাইন থাকায় দিনে ১২টি ট্রেন চলাচলে যানজটের ধাক্কা খেতে হয় সাধারণ মানুষদের। অপ্রতুল সড়ক ও সংযোগ সড়ক না থাকায় মূল শহরের উপর দিয়ে চলাচল করতে হয় প্রায় ২০ হাজার রিকশা, ২ হাজার ইজিবাইক, ২ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশা, প্রায় ১০ হাজার মোটরসাইকেল, তিন শতাধিক প্রাইভেট কার। এই হিসেবে মূল শহরের মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৪ হাজারের ওপর যানবাহন চলাচল করে। এতে করে শহরের সড়কগুলোতে যানজট লেগে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘদিন এভাবে ভোগান্তির পর জেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া হলো উদ্যোগ। এবার জেলা প্রশাসন থেকে অবৈধ যানবাহন চলাচলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। নির্দিষ্ট সনদ ও লাইসেন্স না থাকলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হবে। এছাড়া মূল শহরে প্রবেশ করতে পারবে না কোনও চার্জার রিকশা। শহরের মোড়ে মোড়ে চার্জার রিকশাগুলো এসে যাত্রী নেমে দেবে। সভায় শহরের মূল সীমানা হিসেবে দক্ষিণে পিটিআই স্কুল মোড় থেকে উত্তরে দত্তবাড়ি, পশ্চিমে রেলওয়ে স্টেশন থেকে পূর্বে চেলোপাড়া স্ট্যান্ড এবং সুত্রাপুর পশু হাসপাতাল মোড়, বাদুড়তলা মোড় এবং জেল খানা মোড় এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া শহরের মাটিডালি থেকে বনানী পর্যন্ত টাউন সার্ভিস চালু করা হবে। মূল শহরের মধ্যে চলাচল করবে ব্যাটারি চালিত ৬ আসন বিশিষ্ট ইজিবাইক। ৪৫ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ১৫ জুলাই ইজিবাইক চলাচলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে দুই হাজার ইজিবাইককে দেওয়া হবে রেজিস্ট্রেশন। দুই হাজার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হলেও প্রতিদিন চলবে এক হাজার ইজিবাইক এবং অপর এক হাজার ইজিবাইক বন্ধ থাকবে। পরের দিন বন্ধ থাকা ইজিবাইকগুলো আবার চলাচল করবে। নিয়মমাফিক একদিন পর পর চলবে ইজিবাইকগুলো। কোন দিন কোন ইজিবাইক চলাচল করবে তা রেজিস্ট্রেশন নম্বরের জোড় এবং বিজোড় সংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যাটারি চালিত দুই আসন বিশিষ্ট অন্য ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত চিকন চাকার রিকশা এবং প্রচলিত অন্য রিকশাগুলো কেবলমাত্র শহরের বাইরে এবং সংযোগ সড়কগুলোতে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা বলা হয়। জেলা পুলিশ বিভাগ থাকবে সহযোগিতায়।
জেলা প্রশাসনের এক সভায় যানজট নিরসনে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি মোট ২১টি সুপরিশমালা উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ। তাতে মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে বগুড়া শহরে মাটিডালি থেকে বনানী পর্যন্ত টাউন সার্ভিস বাস চালু এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনায় শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা করতোয়া নদীর দুই তীরে বিকল্প সড়ক নির্মাণ এবং রিকশা চালানোকে যাতে আর কাউকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে না হয় সেজন্য দরিদ্র জনগণের জন্য ব্যাপক হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। যানজট নিরসনে মধ্য মেয়াদি সুপারিশমালার ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও রিকশার উৎপাদন, শো-রুম ও চার্জিং স্টেশন এবং সিএনজি চালিত নতুন অটোরিকশা বিক্রিও বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি সুপারিশ মালায় শহরের চেলোপাড়া থেকে কাটনারপাড়া এলাকায় যাতায়াতের জন্য করতোয়া নদীর ওপর একটি সেতু এবং শহরের মধ্যে আরও কিছু পার্কিং জোন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, বর্তমানে বগুড়া শহরে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা এবং প্রচলিতসহ মোট ৪০ হাজার রিকশা চলাচল করছে। এছাড়া রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা রয়েছে ১২ হাজার। বর্তমানে জেলায় সিএনজি চালিত ৭ হাজার ৪৫৮টি অটোরিকশাকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও ৫০০টি অটোরিকশাকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। এর বাইরে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশার চলাচল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। আর শহরে যানজট নিরসনে খুব শীঘ্রই নীতিমালা করে মাঠে নামা হবে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, লাইসেন্সের নীতিমালা অনুযায়ী কেবল যারা নিজেরাই মালিক ও চালক সেইসব ইজিবাইকগুলোকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ