ছাত্রদল প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব ৭১।
আজ শুক্রবার বিকাল ৪টায় শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব পেয়েছি। আজকে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতায় এদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসময়ে এসেও এদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই।’
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরে যারা হত্যাকারী ছিল আজকে আবার তাদেরই কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি। আমি এই ঘটনার ধিক্কার জানাই, তীব্র প্রতিবাদ জানাই। জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘এদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্তহীন ত্যাগ রয়েছে। কাজেই এদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল অপশক্তি মোকাবিলা করতে হবে।’ হুমকি দেওয়াদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও প্রেতাত্মরা এখনো এদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছেন এদেশকে পঁচাত্তর বানাবেন, কিন্তু লাভ নেই। আপনাদের এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। আর বাস্তব হবে না। সকল ষড়যন্ত্রের মূল উপড়ে ফেলা হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহানারা আরজু বলেন, ‘রক্তের ওপর যেই দলের জন্ম হয়েছে সেই দল এখনো নানা ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।’
তিনি বলেন,‘এদেশের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। তাদের পরিকল্পনা শুধুই হত্যাকাণ্ড। নির্লজ্জ যারা, বিবেকহীন যারা তাদের বিবেকের কথা বলে লাভ নেই। তারপরেও এদেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, ‘আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, যারা বঙ্গবন্ধুর দেশে দাঁড়িয়ে পঁচাত্তর নিয়ে দুঃসাহসিক স্লোগান দিয়েছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের রিমান্ডে নেওয়া হোক। তাহলে তাদের এই দুঃসাহসিকতার উদ্দেশ্য বেরিয়ে আসবে।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না, জাতির পিতাকে মানে না তারা আবারও আরেকটি পঁচাত্তর ঘটানোর পাঁয়তারা করছে। কয়েকদিন ধরে বিএনপি সমর্থিত দলগুলো পঁচাত্তরের হতিয়ার বলে হাতিয়ার হিসেবে আরও একটি হত্যাকাণ্ডের মনমানসিকতা পোষণ করছে। এদেশে খুনিদের আর কোনো রক্তপাত করতে দেওয়া হবে না।’ তিনি গৌরব ৭১ এর এই প্রতিবাদী কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করে ওই স্লোগান উচ্চারণকারীদের শাস্তির দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজপথে ছিলাম, রাজপথে থাকব। আর রাজপথে অপশক্তির জবাব দেব।’
অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বলেন, ‘৭৫’র ১৫ আগস্টের ইতিহাস আমাদের সকলের জানা। কিন্তু এই ২২ এ এসেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আবারও কোন সাহসে ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’ এই খুন হুমকির স্লোগান দিচ্ছে? বাংলাদেশের সকল মানুষ জানে এটি ছিল একটি হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস। আর এই স্লোগান ছিল সেই খুনিদের হাতিয়ার।’ যারা এই দুঃসাহসিক স্লোগান দিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
পাঁচবিবি পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৭৫ এর হত্যাকাণ্ড যারা ভুলে গিয়ে আবারও নতুন করে পাঁয়তারা শুরু করছে। অথচ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার মতো গর্হিত ঘটনার পেছনে মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিল জিয়াউর রহমান। এখন পঁচাত্তরের হাতিয়ার হিসেবে তারা আবারও সেই রক্তমাখা দিনের কথা জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এবং খুনি মনমানসিকতা নিয়ে রাজপথে হাঁটছে। যারা এই বৈরী ও খুনি মনমানসিকতার রাজনীতি করছে তাদের সচেতন করে দেওয়ার সময় এসে গেছে। এদেশে আরেকটি ১৫ এর হত্যাকাণ্ড হতে দেব না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক সরকার বলেন, ‘কীসের হাতিয়ার? ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার? আমি মুক্তিযোদ্ধা বলছি, পঁচাত্তরের কোনো হাতিয়ার হতে পারে না। পঁচাত্তরের হাতিয়ারদের বলছি, তোমরা পদ্মা সেতুতে উঠবে না। তোমাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’
কলামিস্ট ও অ্যাক্টিভিস্ট লীনা পারভীন বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এখনো এদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লেগে আছে। যখন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় ঘনিয়ে আসছে তখন তারা স্লোগান দিচ্ছে পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার! কত বড় স্পর্ধা তাদের।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার বলেন, ‘এদেশকে পঁচাত্তর করতে জীবনেও পারবেন না। সাহস থাকলে ঘোষণা দিতে রাজপথে নামেন। ১৯৭৫ সাল আর ২০২২ সাল এক নয়।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলকে বলতে চাই এরপরে এমন কিছু যদি আর উচ্চারণ করেন তাহলে এমন শিক্ষা দেওয়া হবে যাতে টর্চলাইট দিয়েও আপনাদের খোঁজে পাওয়া যাবে না।’
গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন বলেন, ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগানটি অনেকের কাছে এটি শুধু একটা স্লোগান মনে হলেও আসলে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টকে মনে করিয়ে দিল ছাত্রদল। এটি প্রকাশ্য হুমকি। জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা এইরকম স্লোগান দিয়ে দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
গৌরব ’৭১ এর সভাপতি এস এম মনিরুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহিনের সঞ্চালনায় এই প্রতিবাদ সমাবেশে বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি, বিবার্তার বার্তা সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ সহকারী গুলশাহানা ঊর্মি, গৌরব ’৭১ এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুপম, রেজওয়ান কাদির মিম, আহবায়ক, শ্যামপুর থানা ছাত্রলীগসহ, সকল শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল উচ্চারণ করেছে ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগানটি। এরপরই এই স্লোগান ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গৌরব ’৭১ সংগঠন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ