রংপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ইদানিং আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবক, সচেতন মহল ও সমাজ বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। রংপুরে গত ৫ মাসে ছয়জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। মোবাইল ফোনে গেম খেলতে নিষেধ করা, পড়াশোনা করতে চাপ দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করছে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, পারিবারিক বন্ধন কমে যাওয়া ও অপ-আকাশ সংস্কৃতির কারণে এমনটা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জুন রাতে রংপুরের মিঠাপুকুরে মোবাইল ফোনে গেম খেলতে নিষেধ করায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে নিরব নামে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। শোবার ঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। এর আগে ৩ জুন রংপুর নগরীর খাসবাগ এলাকায় গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় আবু সায়েম (১৭) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে সাতগাড়া মাদ্রাসায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
গত ২১ মে রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া কেরামতিয়া মসজিদ সংলগ্ন একটি বাসা থেকে নাভা কৃষ্ণা নামে এক শিক্ষার্থীর ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়। নবম শ্রেণির ছাত্রী নাভা কৃষ্ণা আত্মহত্যার আগে ‘আমাকে ক্ষমা কর, তোমাদের আব্দার পূরণ করতে পারলাম না’ এই চিরকুট লিখে গেছে। পুলিশের ধারণা অভিভাবকদের সাথে অভিমান করে ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
১৩ মে রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স পুড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লালবাগ এলাকায় একটি ছাত্রী নিবাস থেকে ইলমা নামে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ছাত্রী নিবাসের বাথরুমে ইলমার গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৫ মে রংপুর নগরীতে সুইসাইড নোট লিখে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। কলেজ রোড দর্শনা এলাকার নীলাঞ্জনা ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে শহিদুল ইসলাম শহীদ (২২) নামে ওই শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তার মরদেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। এতে তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় উল্লেখ করে কিছু কথা লেখা ছিল। তার মৃত্যুতে যেন কোনো মামলা না হয়, সেটিও নোটে বলা হয়েছে।
এর আগে ২৭ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় মোবাইল ফোনে গেম খেলায় মায়ের বকুনি খেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী। মৃত ওই ছাত্রীর নাম সুলতানা আক্তার শীলামনি (১০)। নিজ শয়ন ঘরে মোবাইলে গেম খেলছিল শিশুটি। দুপুরে তার মা এ নিয়ে বকাঝকা দেন। পরে বাড়ির লোকজন ঘরে ঢুকে দেখতে পান, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছে শীলামনি। পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধাার করে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ভাবিয়ে তুলছে অভিভাবকদের।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বন্ধন শিথিলতা ও অপ-আকাশ সংস্কৃতিক প্রভাবে শিক্ষার্থীরা আত্মহননের মতো কঠিন পথ বেছে নিচ্ছেন। পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী ও আকাশ সংস্কৃতির খারাপ প্রভাব কমাতে পারলে শিক্ষার্থীদের এই আত্মহত্যার প্রবণতা কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া অনেক সময় অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের ওপর অধিক চাপ প্রয়োগ করেন। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন মনে করেন, বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করছেন। শিক্ষাথীদের খেলাধুলা ও লেখাপড়ায় মনোযোগী করতে পারলে, তাদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা কমে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই