বরিশালের হিজলা উপজেলায় ১৫ বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধান কাটা মামলা হয়েছে আদালতে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনেও মৃত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওই মামলায় মৃত ‘আসামির’ বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে আদালত। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা বলে ‘আসামি’ গ্রেফতার করতে গিয়েই বিভ্রান্তিতে পড়ে পুলিশ। জানতে পারে আসল সত্য।
এ ঘটনার পর মামলার অভিযোগ থেকে মৃত ‘আসামিকে’ বাদ দিতে আদালতে আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা হিজলা থানার হরিনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান। আসামির বাড়ি না গিয়ে সাক্ষীদের তথ্যের ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তিকে পুলিশ তদন্তে অভিযুক্ত করা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
হিজলা উপজেলার আবুপুর গ্রামে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিরোধীয় জমির ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগে গত ১৬ জানুয়ারি বরিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় বিচার আদালতে (হিজলা) প্রতিপক্ষের ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য হিজলা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। হিজলা থানার হরিনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান কোনো ধরনের সরেজমিন তদন্ত ছাড়াই বাদীর অভিযোগ করা ১০ আসামির বিরুদ্ধে গত মার্চে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। আদালত অভিযুক্ত আসামিদের প্রতি সমন জারির নির্দেশ দেন। যথাসময়ে আদালতে না আসায় ১০ আসামির সকলের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন।
আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায় গত ২৫ মে। ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা অগ্রগামী করে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ২৬ মে হিজলা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন জেলা পুলিশ সুপার। গত ৭ জুন ওই মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত অন্যতম দুই আসামি মো. হাসান সরদার ও তার বাবা আলী হোসেন সরদারের বাড়ি গিয়ে পুলিশ জানতে পারে আলী হোসেন সরদার মারা গেছে ১৫ বছর আগে ২০০৭ সালে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান হাসান। তবে গ্রেফতার এড়াতে পরদিন ৮ জুন সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে জামিন নেন হাসানসহ ওই মামলার ৬ জন আসামি। আর তিনজন পলাতক রয়েছে।
একই দিন অপরজন মৃত ‘আসামি’ আলী হোসেন সরদারকে ওই মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিতে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করেন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলকারী উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান।
১৫ বছর আগে মারা যাওয়া বাবাকে ধানকাটা মামলার আসামি করা এবং তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় ক্ষুব্ধ এ মামলার অন্যতম আসামি হাসান সরদার।
তার দাবি, সরকারিভাবে বন্দোবস্ত পাওয়া আবুপুর চরের এক একর জমি নিয়ে মামলার বাদী আব্দুল লতিফ খান ও প্রতিবেশী মো. কাঞ্চণের মধ্যে বিরোধ ছিল। উভয়পক্ষ স্থানীয় সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাগাভাগি করে ওই জমি ভোগ দখল করছে। তবে কাঞ্চন তার জমির অংশ সেকান্দার নামে একজনের কাছে হস্তান্তর করেন। সেকান্দারের সেই জমি গত ৪ বছর ধরে বর্গা হিসেবে চাষ করেন তিনি (হাসান)। বর্গাদার হিসেবে তিনি তার জমির ধান কেটে নেন। এ কারণে তিনিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে বাদী।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আব্দুল লতিফ মুঠোফোনে বলেন, তার নিজ বাড়ি মেমানিয়ার ডিক্রির চর থেকে আবুপুর চরের জমি দুই নদী পার হয়ে অন্তত ১০ মাইল দূরে। তার জমির ধান কেটে নেওয়ায় স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। সব আসামি চেনেন না। তখন জানতেন না আসামি আলী হোসেন ১৫ বছর আগে মারা গেছেন।
আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামের চৌকিদারসহ সাক্ষীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে ১০ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তখন জানতেন না এক আসামি ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। থানা থেকে অনেক দূরে দুই নদী পেড়িয়ে ঘটনাস্থলে যেতে হয় বলে তখন খুঁজতে আসামির বাড়ি যাই নাই। আসামির বাড়ি যাওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি ধরা পড়ার পর মৃত ‘আসামির’ নাম অভিযোগ থেকে বাদ দিতে আদালতে আবেদন করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই