লঞ্চ-বাসে রাজধানী ঢাকায় ফেরার টিকিট নেই। ঈদের ষষ্ঠ দিনেও লঞ্চ-বাসে রাজধানীর কর্মস্থলে ফেরার টিকিটের জন্য হাহাকার চলেছে বরিশালে। পদ্মা সেতু চালুর পর ২৪ ঘণ্টা বাস সার্ভিসের আশা থাকলেও বাস স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত ট্রিপ চালাতে পারছেন না সড়ক পরিবহন কোম্পানিগুলো। নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি দ্বিগুণ স্পেশাল সার্ভিসের পরও কেবিন নেই নৌ পথের কোনো লঞ্চে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের পর তেমন যাত্রী হয়নি ঢাকার। গত ১১ জুলাই ঈদের ছুটি শেষ হলেও ঢাকা ফেরার চাপ বেড়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত এই চাপ অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন তারা।
শুক্রবার বরিশাল নদী বন্দর থেকে নিয়মিত সার্ভিসের ৭টি এবং স্পেশাল সার্ভিসের ৭টি সহ মোট ১৪টি লঞ্চ রাজধানীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দুপুরের পর থেকেই তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীরা লঞ্চের ডেকে উঠে আসন গ্রহণ করতে শুরু করে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই যাত্রীতে টইটুম্বুর হয়ে ওঠে ঢাকামুখি এমভি সুন্দরবন-১০ ও ১১, সুরভী-৮ ও ৯, অ্যাডভেঞ্চার ১ ও ৯, কীর্তনখোলা-২ ও ১০, পারাবত-৯, ১০, ১৮, মানামী-১, কুয়াকাটা-২ এবং প্রিন্স আওলাদ-১০ নামের বিশালাকার বিলাসবহুল যাত্রীবাহী নৌযানগুলো। যাত্রীর চাপ থাকায় কেবিন টিকিট আগেভাগেই বিক্রি হয়েছে করোনাকালের বাড়তি দামে। ভিআইপি এবং বিজনেসক্লাসেও আদায় করা হয় আগের বাড়তি ভাড়া। ডেক টিকিট বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩শ’ টাকা দরে। যা করোনাকালের আগে ছিল ২৫৫ টাকা। এদিকে যাত্রীর চাপ থাকায় বিগত দিনের মতো কেবিন টিকিট কালোবাজারি ছিল তুঙ্গে। চিহ্নিত কিছু দালাল এবং লঞ্চের শ্রমিক-কর্মচারীরাই দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে কালোবাজারে বিক্রি করেছে কেবিন টিকিট। অতিরিক্ত ভীর সামলাতে নদী বন্দরে প্রশাসনের উপস্থিতি থাকলেও তাদের বাধা নিষেধ যাত্রীরা শুনেছে কমই।
বরিশাল থেকে শুক্রবার টইটুম্বুর যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. মজিবর রহমান বলেন, ঈদের পর ঢাকার উদ্দেশে তেমন যাত্রী হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে চাপ পড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার অনেক চাপ ছিল। আগামীকাল শনিবারও বরিশাল থেকে ঢাকামুখি এই স্রোত অব্যাহত থাকবে বলে তারা ধারণা করছেন।
বরিশাল নদী বন্দর থেকে ১৪টি বড় লঞ্চ ছাড়াও ঝালকাঠী থেকে ১টি, বরগুনা থেকে ২টি এবং তুষখালী থেকে ১টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। প্রতিটি লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী পরিবহনের প্রবণতা দেখা গেছে।
লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, ঈদ উপলক্ষে আগে থেকেই ১৫ ও ১৬ জুন ঢাকামুখি স্পেশাল সার্ভিস ঘোষণা করা হয়েছিল।
শুক্রবার নিয়মিত এবং স্পেশালসহ মোট ১৪টি লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। আগামীকাল শনিবারাও একই সংখ্যক লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দরে ঢাকার উদ্দেশে প্রস্তুত থাকবে। বেশি সংখ্যক লঞ্চ সার্ভিসে যুক্ত করায় এবার যাত্রীরা কোনো ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা এবং ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকার উদ্দেশে যেতে পারছে। লঞ্চ ভাড়া বাড়ানো হয়নি, সরকার নির্ধারিত দরেই ডেক এবং কেবিন ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, লঞ্চের চেয়েও অধিক চাপ পড়েছে সড়ক পরিবহনে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখি বাসগুলোতে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই।
নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার একেএম শাহিন জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর গত বছরের তুলনায় সড়ক পথে ঢাকার ঈদ ফেরত যাত্রী ১০ গুণ যাত্রী বেড়েছে। হাজার হাজার যাত্রী, কিন্তু টিকিট নেই। নিয়মিত ট্রিপের পাশাপাশি স্পেশাল সার্ভিসেও বাস চালানো হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বাস না থাকায় তারা টিকিট বিক্রি করতে পারছেন না। এখন আগে-ভাগে বিক্রি হওয়া টিকিটের যাত্রীদের ব্যবস্থাপনা করে বাসে তুলে দিচ্ছেন মাত্র। সব সিটে যাত্রী নিয়ে বাসগুলো ঢাকা গেলেও ঢাকা থেকে ফিরছে খালি বাস নিয়ে। মাত্র সাড়ে ৪৫০ টাকা সিট ভাড়ায় সার্ভিস চালিয়ে মালিকদের তেমন কিছু থাকছে না। অন্তত আরও ৫০ টাকা ভাড়া না বাড়ালে নন এসি বাসগুলো সার্ভিসে টিকে থাকতে পারবে না বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
অপরদিকে, এই রুটের এসি বাসগুলো ৭ থেকে ৮ শত টাকা সিট ভাড়া আদায় করছে।
এদিকে, বরিশাল থেকে বিআরটিসি’র ৯টি এসি বাস সাড়ে ৫ শত টাকা ভাড়ায় প্রতিদিন অন্তত ১৫টি ট্রিপ দিচ্ছে গুলিস্তান পর্যন্ত। এছাড়া কুয়াকাটা থেকে বরিশাল হয়ে গুলিস্তান ২টি এবং ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত ১টি বাস চালাচ্ছে বিআরটিসি। বিআরটিসির একজন ইজারাদার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন