অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, বই পড়া একটি সাংঘাতিক ব্যাপার। যারা বই পড়ে আর বই পড়ে না তাদের মধ্যে পার্থক্য আকাশ আর পাতাল। বই পড়ার অভ্যাস মানুষের কল্পনা শক্তি বাড়ায়। এ জন্য তোমাদের বই পড়তে হবে। বিভন্ন রকমের বই আছে, তা পড়তে হবে এবং প্রতিদিন পড়তে হবে।
বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম দেওভোগের ভূইয়ারবাগ এলাকা বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে 'কৈশোরে তারুণ্যে বই' প্রতিপাদ্যে আয়োজিত বইমেলা-২০২২ এর উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি ছোটদের জন্য বই লিখি। তাই তারা আমাকে অনেক পছন্দ করে। তারা আমাকে লম্বা চিঠি লিখে, একটি চিঠি এলো। সেখানে লিখা, আমি বই পড়তে পছন্দ করি, কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে বই পড়তে দেয় না। আমি চিঠির উত্তরে লিখেছি, তোমার বাবা-মা যদি তোমাকে খেতে না করে, তবে তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে খাও, চুরি করে খাও। ঠিক সেভাবে তোমার বাবা-মা যদি তোমাকে বই পড়তে না দেয়, তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়, বাথরুমে যেয়ে বই পড়, প্রয়োজনে কাথার নিচে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে বই পড়। তোমাকে বই পড়তে হবে। কারণ বই না পড়লে তুমি মানুষ হবে না। তুমি যদি বই পড় তবে তুমি কল্পনা করতে পারবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন জ্ঞানের বেশি গুরুত্ব নাই, কল্পনা শক্তির গুরুত্ব আছে। বড় হতে হলে বই পড়তে হবে, আমরা চাই তোমরা বড় হও এবং বড় হয়ে এদেশের দায়িত্ব নেও।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তোমরা বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেছ? তোমরা হয়তো ভাবছো এই মানুষটা কি পাগল, জিজ্ঞেস করে বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেছি কিনা। বাংলাদেশে কে বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেনি? ৯৪ সালে যখন দেশে আসলাম, তখন এই দেশে কেউ বঙ্গবন্ধুর নাম বলতে পারতো না। একটা সময় ছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নাম নিলে শাস্তি দেয়া হতো। শুধুু তাই নয়, রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর নাম বলা হতো না, টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হতো না।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসলো তখন টেলিভিশন কিনলাম, নিশ্চয়ই এবার বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হবে। ২১ বছর পর প্রথমবার বঙ্গবন্ধুকে টেলিভিশনে দেখানো হলো। আমরা একটি খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছি। যেই মানুষটি স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে একটি দেশ এনে দিলেন, সেই দেশে তার নাম নেয়া অপরাধ ছিল। আসলে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই জিনিস, পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে, যেখানে একটা মানুষ ও দেশকে একসঙ্গে তুলনা করা হয়।
বইমেলার উদ্বোধন শেষে তিনি মেলায় আগত ১০টি প্রকাশনীর স্টলগুলো ঘুরে দেখেন। পরে তিনি বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের পাঠাগার ঘুরে দেখেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের বই পড়ার আগ্রহ ও পাঠাগারের প্রশংসা করেন।
বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কাশেম হুমায়ূনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত আরা, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী তুষার আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সফিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) নাজমুল হাসান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সদস্য আব্দুস সালাম, কাশেম জামাল, দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, জাকির হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন সোহেল, সালমা পারভিন প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত