খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশ প্রতিহত করতে পুলিশ গণগ্রেফতার শুরু করেছে বলে দাবি করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, বিভাগে অন্য জেলা থেকে নেতাকর্মীদের খুলনায় আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে। খুলনা, বাগেরহাট. যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লঞ্চ-ট্রলার পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও খুলনায় গণসমাবেশ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনস্রোতে পরিণত হবে।
শুক্রবার দুপুরে খুলনা কেডি ঘোষ রোডে বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু।
তিনি কর্মসূচি সফল করতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের উস্কানিমূলক আচরণ না করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একাত্তরে রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যেখানে অবস্থান করছিলেন, পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে পুলিশ রীতিমতো অপমান করেছে।
তিনি বলেন, ২২ অক্টোবর দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ সমাবেশ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। জনদাবির সমর্থনে আন্দোলনে শহীদ পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচারের দাবিতে। এই সমাবেশ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, জ্বালানি তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে। যে কোনো মূল্যে এই কর্মসূচি সফল করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবীদ শামীমুর রহমান শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু,
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম জহীর ও জেলার আবু হোসেন বাবু।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে খুলনা সদর থানায় খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিক, মিজানুর রহমান বাবু, বেল্লাল হোসেন, জসিমউদ্দিন লাবু, শফিকুল ইসলাম, মিজান ও কবির ফরাজি, সোনাডাঙ্গা থানায় নজরুল ইসলাম, ডালিম, ডা. শাহ আলম, মাহমুদ আলম বাবু মোড়ল, জুলু, কাজী সেলিম, খালিশপুর থানায় মেহেদী, সামাদ বিশ্বাস, গোলাম মোস্তফা ভূট্টো, মো. হাসান, দৌলতপুর থানায় হুমায়ুন কবির, রাসেলুজ্জামান, খানজাহান আলী থানায় জসীম ভূঁইয়া, মামুন ও উজ্জল এবং হরিণটানা থানায় কামাল, হেলাল ও হযরত আলী।
গভীর রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীবাহী একটি বাস সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যেখানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মুন্সি, কৃষক দল আহ্বায়ক মুকুল মেম্বার সহ ১১ জন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে খুলনায় শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে দুইদিনের পরিবহন ধর্মঘট। সড়ক মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ ও যত্রতত্র বিআরটিসির কাউন্টার বন্ধের দাবিতে খুলনা জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস মালিক সমিতি এ পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, ভৈরব থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত নদী খনন, ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাসসহ ১০ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছে যাত্রীবাহী লঞ্চ শ্রমিকরা।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সমাবেশে আসতে বাধা দিতে বাস ও লঞ্চ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
ধর্মঘটের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে বাস স্টেশনে এসে গন্তব্যে পৌঁছানোর বাস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা। অনেকে বাস না পেয়ে বিকল্প পথে মোটরসাইকেল বা অটোরিক্সায় অধিক ভাড়া দিয়ে গন্তেব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন