ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা ৪৮ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে ডিএনডি’র ভেতর জলাবদ্ধতায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। উঁচু এলাকায় হাঁটু ও নীচু এলাকা কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তা-দোকানপাট। বাড়িঘরে পানি। কোথায় ড্রেন আর কোথায় রাস্তা তা বোঝা দায়। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালযুক্ত পানি ও ড্রেনের পানি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে একাকার। ময়লা, নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে চলছে সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয়, ডিএনডি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ শহরের অলিগলি সর্বত্র রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে একাকার।
এদিকে ডিএনডির জলাবদ্ধতা সমস্যা খোঁজ খবর নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। তিনি এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএনডি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ফতুল্লার মুসলিমনগর, ধর্মগঞ্জ, হরিহরপাড়া, কাশিপুর, পৌষাপুকুরপাড়, হাজীপাড়া, দক্ষিণ সস্তাপুর, কোতালেরবাগ, শেহাচর, ইসদাইর, ভূঁইগড়, দেলপাড়া, আদর্শনগর, নয়ামাটি, পিলকুনি, বুড়ির দোকান সস্তাপুর, হাজিগঞ্জ, কুতুবপুর সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিকের ১, ২, ৩, ৭, ৮, ৯, ১৩নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ফতুল্লার পৌষাপুকুর ও লালপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার চিত্র ভায়াবহ। সড়কের পানি হাঁটু ছাড়িয়ে কোমর পর্যন্ত।
এ বিষয়ে ফতুল্লার মধ্য ইসদাইর এলাকার ডিএনডির বাসিন্দা সুতা ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান জানান, বাসার সামনে হাঁটু পানি। বাসা থেকে বের হতে কোনো রিকশাও পাচ্ছি না।
ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হেলাল মাস্টারের ছেলে রাকিব জানান, এতো পানি এলাকার মানুষ আর কখনো দেখেনি। ভয়াবহ এক পরিস্থিতি এলাকার। সব ডুবে গেছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির শিকার হয় এলাকার মানুষ। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও সাড়ে তিন বছরেও সুফল পাচ্ছে না মানুষ।
এ বিষয়ে ফতুল্লা ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আউয়াল হোসেন জানান, এটা জলাবদ্ধতার পানি। নেমে যাবে। মূলত একটা সময় ডিএনডি পুরো এলাকা খালি ছিল। সেই খালি জায়গা দিয়ে বৃষ্টির পানি অনায়েসে নেমে যেতে পারত। এখন যেভাবে বাড়িঘর করা হয়েছে তা অপরিকল্পিত। বিভিন্ন স্থানে খালগুলো দখল করে ড্রেনে পরিনত হয়েছে। তাই পানি নামতে একটু সময় লাগবে।
তিনি আরও জানান, ফতুল্লার ইসদাইর গাবতলী এলাকা সবচাইতে বেশী তলিয়ে যাওয়ার কারণ হলো লালপুর, সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন এলাকার পানি এ দুটি এলাকা দিয়ে রেললাইন খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। তবে নিষ্কাশন ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে একটি পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়নে কাজ চলছে।
এদিকে শহরের সিটি করপোরেশন এলাকার গলাচিপা, মাসদাইর ,গুদারাঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ড্রেন আর বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃৃষ্টিতে শহরের রাস্তায় হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে যায়। মূল শহরের এ জলাবদ্ধতায় মানুষ চরম বিরক্ত।
এ বিষয়ে শহরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ মোল্লা জানান, এত উন্নয়নকর দেই। নাগরিক সুবিধা তো পাচ্ছি ই না। এরপর পর কিছুদিন দিন পর পর সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীশ ওসমান বলেন, টানা ৪৮ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডিএনডির যে যে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে তা কেন হয়েছে এবং দ্রুত কিভাবে নিষ্কাশন করা যায় তা ডিএনডি প্রকল্প পরিচালকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্পটে টিম কাজ করছে।
একই কথা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর আহম্মেদ স্বপন জানান, এমপি শামীম ওসমান জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনে ফোন দিয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যদের তৎপর থাকতে বলেছেন। কখন কোথায় কি দরকার তা জানতে যোগাযোগ রাখতে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ পাম্পা হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানান, পাম্প হাউজে ৪ টি পাম্প চলছে। বিদ্যুতের কারণে সামান্য সমস্যা হচ্ছে কয়েকটি পাম্প চালাতে। তবে ডিএনডিতে পানির লেয়ার কম। খুব শিগগিরই পানি নেমে যাবে।
এ বিষয়ে ডিএনডি প্রজেক্ট অফিসার মেজর গাজী নাজমুল হাছান বলেন, ডিএনডির যেখানে খালগুলো সরু হয়ে আছে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে সেই স্থানগুলোকে চিহ্নিত করতে মাঠে আমাদের টিম কাজ করছে। একই সাথে প্রায় ৭ টি পাম্প চলছে। শিবু মার্কেট, পিটালিরপুল পাসপোট অফিস, ও মৌচাক এলাকার পানি নিষ্কাশনের বৃহৎ পয়েন্টে পানি নিষ্কাশনে দ্রুত করার কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় পানি জমে আছে সেখানে নিষ্কাশন ব্যবস্থা একটু অপ্রতুল হতে পারে।
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ৫ই ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীন ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। এর আগে, প্রথম ধাপে ২০১৬ সালে একনেকের সভায় ডিএনডি প্রকল্পের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হয়। পরবর্তীতে ডিএনডি এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধনী)’তে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার অনুমোদন নিয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় সাড়ে ৩ বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫০.৬৫ শতাংশ। ওদিকে ডিএনডিবাসি যতবার জলবাদ্ধতায় পতিত হয় ততবার ডিএনডির প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে থাকেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল