ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই সদস্যকে ফিল্মী কায়দায় ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর জেলা রাজধানী সংলগ্ন হওয়ায় মহানগরী এলাকাসহ পুরো জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক রাখা হয়েছে।
এদিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে আদালতে নেওয়া ওই দুই আসামি পালানোর ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিল না বলে দাবি করেছেন জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় শুনানির জন্য আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাত সদস্যকে সকাল ৬টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ছিলেন। তারা প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও অভিজিৎ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি। দুপুরে আদালত থেকে গারদখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের চোখে স্প্রে করে ছিনিয়ে নেওয়া ওই দুইজনকে ছিনিয়ে নেন তাদের সঙ্গীরা।
জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, রবিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ হতে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সাত সদস্যকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কাশিমপুর কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের ঢাকায় নিয়ে কোর্ট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোর্ট পুলিশের হেফাজত থেকে আসামিরা পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আদালতে নেওয়ার সময় জঙ্গিদের ডান্ডাবেড়ি না পরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারাগার থেকে আসামি আদালতে পাঠানোর সময় ডান্ডাবেড়ি না পরানোর আদালতের নির্দেশনা থাকায় তাদের তা পরানো হয়নি।
এদিকে, আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কোনাবাড়ি থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ডেপুটি জেলার জানান, গাজীপুরের কাশিমপুরে হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারসহ চারটি কেন্দ্রীয় কারাগার রয়েছে। কারাগারে সাধারণত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। স্বাভাবিক সময়ে চেকপোস্টগুলোতে ৫ থেকে ৬ জন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর কাশিমপুর কারাগার ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চেকপোস্টগুলোতে জনবল বাড়ানো হয়েছে। এখন চেকপোস্টগুলোতে ১০-১২জন কারারক্ষী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। কারাগারে আসামি আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারাগার ও ক্যাম্পাসে প্রবেশ-বের হওয়ার সময় দর্শণার্থীদের ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে। তাদের নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরায়ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কারাগার ও আশপাশের এলাকায় নজরদারি করছেন।
তিনি আরও জানান, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আবু সিদ্দিক ওরফে সোহেল ওরফে সাকিব (৩৪) লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে এবং মাইনুল হাসান শামীম (২৪) সুনামগঞ্জের মাধবপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ