সুমাইয়া তাবাসসুম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। ক্লাস শেষ করে সহপাঠীর সঙ্গে কেনা কাটা করতে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন তিনি। সহপাঠীর পরামর্শে ক্যাম্পাসের পাশে ইসলামপুরে ঘড়ি কিনতে গেলেন। ঘড়ি কেনা শেষে সহপাঠীর সাথে গল্প করতে করতে বাসায় ফিরছেন সুমাইয়া।
কিছুক্ষণ পরে বাড়িতে কল দেওয়ার জন্য ব্যাগ থেকে মুঠোফোনটি বের করার জন্য ব্যাগে হাত দিলে দেখে তার মুঠোফোনটি নেই। বিস্মিত হয়ে সুমাইয়া কিছু সময় এদিক-সেদিক ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ফোনটা নিয়ে কেউ পালিয়ে গেল নাকি। সুমাইয়া সহপাঠীর সঙ্গে থাকা স্বত্বেও ফোনটা ছিনতাই হয়েছে কখন টের পায়নি।
পরে বুঝতে পারলো সুমাইয়া তার প্রিয় মুঠোফোনটি ছিনতাই হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠীকে নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে বড় ভাই এবং সহপাঠীদের নিয়ে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ডায়েরি করার ছ'মাস পেরেলোও এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি সুমাইয়া'র ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনটি।
জবির আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিকালে টিউশনি শেষ করে মেসের উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন শাঁখারি বাজার মোড় দিয়ে। সন্ধ্যার আগে রাস্তায় ব্যস্ততা বেড়েছে পথচারীদের বাসায় ফেরার। হঠাৎ করে ফয়সালের মুঠোফোনটি বেজে উঠলে পকেট থেকে হাত দিয়ে বের করে। কিন্তু মুঠোফোনটি বের করে কল রিসিভ করার সময় হটাৎ একজন এসে ফোনটা নিয়ে দৌড় ভিক্টোরিয়া পার্কের দিকে দৌড়ে চলে গেল।
ফয়সাল পিছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে চোর চোর বলে আওয়াজ করলেও এগিয়ে আসেনি কেউ। এ সুযোগে ছিনতাইকারী ফোনটি নিয়ে নিমিষেই হওয়া হয়ে গেল ফয়সাল কিছু না বুঝার আগে। তাৎক্ষণিকভাবে ফয়সাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়িতে এসে ঘটনাটি খুলে বললে তাকে সাধারণ ডায়েরি করতে বলে পুলিশ। তারপর সকল নিয়ম-কানুন মেনে শখের মুঠোফোনটির জন্য সাধারণ ডায়েরি করে মন খারাপ আর বিষন্নতা নিয়ে মেসে ফিরেছেন।
সুমাইয়া কিংবা ফয়সাল জানে তাদের ছিনতাই হওয়া প্রিয় মুঠোফোনটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের দু'জনের জীবনে। শত চেষ্টা করেও তারা ফিরে পায়নি ছিনতাই হয়ে যাওয়া মুঠোফোন দুটি। যদিও দু'জন থানায় সাধারণ ডায়েরি করে এসেছে। তারা দু'জন জানে কতশত স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে। অতি প্রয়োজনীয় মুঠোফোনটি হাতে ফিরে পাওয়ার আশায় প্রহর গুনছে দু'জনে।
সুমাইয়া ফয়সালের মতো শতশত মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে গত ছয়মাসে পুরান ঢাকার ব্যস্ততম সদরঘাট অভিমুখী রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে। বিশেষ করে ইসলামপুর, পাটুয়াটলী, সদরঘাট, ভিক্টোরিয়া পার্ক, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতি বাজার মোড়সহ আশেপাশের এলাকায় যেন নিয়মিত অথবা হরহামেশাই ঘটছে এসব মুঠোফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা।
কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক শাহেব আলী জানান, আমাদের থানায় গড়ে প্রতিদিন পাঁচটা থেকে সাতটা মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের সাধারণ ডায়েরি করে থাকি আমরা। কখনো কখনো এ সংখ্যাটি আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
মুঠোফোন ছিনতাই হওয়া ভুক্তভুগী শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসসুম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাই হওয়া খুবই নেক্কারজনক বিষয় একজন শিক্ষার্থীর জন্য। এসব ছিনতাইকারীরা কিভাবে মুঠোফোন ছিনতাইয়ের সাহস পায় এ এলাকা থেকে এটা আমার বোধগম্য হয় না।
চারপাশে এতো পুলিশ এতো মানুষজনের উপস্থিতে কিভাবে তারা এমন জঘন্যতম একটা কাজ করে তা খতিয়ে দেখতে হবে ভালো করে। যার মোবাইল ফোন ছিনতাই হয় সেই বুঝতে পারে কতটা কষ্ট এবং ক্ষোভ জন্মে নিজের উপর। পুলিশ শুধু ডায়েরি নিবে কিন্তু এসব ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারবে না তাহলে এমন ডায়েরি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই ।
এদিকে ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, একটি মুঠোফোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা হয়তো সবারই জানা। একেকজনের মুঠোফোনের দাম হয়তো একেক রকম হতে পারে কিন্তু গুরুত্বটা সবার কাছে সমান। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মোবাইলে অনেক পুরোনো দিনের স্মৃতি এবং গুরত্বপূর্ণ তথ্য জমে থাকে যা টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাবে না কখনো। আমি চাই না আমার মতো আর কারো প্রিয় মুঠোফোনটি এভাবে ছিনতাই হয়ে যাক।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করি। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মুঠোফোনগুলো উদ্ধার করার জন্য। যেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব সেগুলো আমরা পৌঁছে দিই এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত