বরিশাল নগরীতে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে পদপ্রাপ্ত ও বঞ্চিতদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় বাকেরগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খানের অনুসারীদের দায়ী করেছেন হামলায় আহতরা। তবে জেলা বিএনপির আহবায়ক উল্টো বিদ্রোহীদের উস্কে দেয়ার জন্য মহানগর বিএনপি এবং জেলা যুবদলের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে কেন্দ্রের নির্দেশে বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা বিএনপির কমিটি হালনাগাদ করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ নভেম্বর হারুন অর রশিদ সিকদারকে আহবায়ক ও মিজানুর রহমান চুন্নু সিকদারকে সদস্য সচিব করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ৪১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠনে ৬০ লাখ টাকা লেনদেনের (অডিওক্লিপ আছে) অভিযোগ উঠলে গত ৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের নির্দেশে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা সদরের দলীয় কার্যালয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে হারুন অর রশিদ জোমাদ্দারকে আহবায়ক ও নাসির উদ্দিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটিতে পদ বঞ্চিত ও সদ্য সাবেক কমিটির নেতারা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর সদর রোডে বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে জেলা আহবায়কের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেন। নতুন কমিটি বিএনপির আগামী দিনের আন্দোলন সামলাতে পারবেনা বলে আশংকা তাদের। এর আগে একই দাবিতে সদর রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা বেড়িয়ে যাওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত বাকেরগঞ্জ উপজেলা নতুন কমিটির নেতাকর্মীদের সাথে মুখোমুখি হয়। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি এবং সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ৮ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
হামলার ঘটনায় বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা কমিটির বর্তমান আহবায়ক আবুল হোসেন খানকে দায়ী করেছেন পদ বঞ্চিতরা। তারা নতুন কমিটি বাতিলের দাবি জানান। অন্যথায় বাকেরগঞ্জের সব ইউনিয়নে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন বউপজেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহবায়ক হারুন অর রশিদ সিকদার।
হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খান। তিনি বলেন, জেলা কমিটির আগের নেতারা অর্থের বিনিময়ে উপজেলা কমিটি গঠন করেছে। মহানগর বিএনপির এক নেতা এবং জেলা যুবদলের এক নেতাও এই টাকার বাটোয়ারা পেয়েছেন। তাদের ইন্ধনেই বিদ্রোহী গ্রুপ বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনের সময় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এবং জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হবে বলে জানান আবুল হোসেন খান।
এদিকে সংঘর্ষের সময় সেখানে কোন পুলিশ ছিলো না। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই পালিয়ে যায় দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাকেরগঞ্জ বিএনপির পদবঞ্চিত ও পদপ্রাপ্তদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন ওসি। সাম্প্রতিক সময়ে জেলা ও মহানগরীর বিভিনন্ন ইউনিটের কয়েকটি কমিটি গঠন নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে বরিশালে।
বিডি প্রতিদিন/এএ