রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। সবুজ ও সুন্দর নগরী গড়তে তার ভূমিকা থাকলেও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রয়েছে রাজশাহী। নির্বাচনে বিজয়ী হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চান তিনি। এ ছাড়া আর কী কী পরিকল্পনা আছে, এসব নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের মুখোমুখি হয়েছিলেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক, কাজী শাহেদ।
বা.প্র : আপনি মেয়র হওয়ার পর দেশ-বিদেশে রাজশাহী গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
খায়রুজ্জামান লিটন : রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আমি দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছি। শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল, এই নগরীকে নতুন রূপে গড়ে তুলব। তাই প্রথমেই পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ায় হাত দিই। ময়লা-আবর্জনা, পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করি। আগে সারা দিন রাস্তাঘাটে ময়লা পরিষ্কার করা হতো। এতে মানুষের ভোগান্তি হতো। কিন্তু ২০০৯ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর রাতে পরিচ্ছন্নতার কাজ চালু করি। এতে মানুষের ভোগান্তি কমেছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১০টির বেশি ময়লা শোধনাগার তৈরি করেছি। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সারা দিন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভ্যানে করে ময়লা এনে সেখানে জমা করেন। রাতে ট্রাকে করে ময়লা শহর থেকে দূরে ভাগাড়ে ফেলা হয়। ফলে রাজশাহীর মানুষের অভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। তারা আগের মতো রাস্তাঘাট কিংবা ড্রেনে ময়লা ফেলেন না। এভাবেই আস্তে আস্তে রাজশাহী একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছে।
বা.প্র : অনেক ওয়ার্ডে এখনো তেমন উন্নত রাস্তাঘাট কিংবা ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এসব ওয়ার্ড নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
খায়রুজ্জামান লিটন : প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্প্রতি ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছি। সেই অর্থ থেকেই আমরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজগুলো করছি। কিন্তু অনেক জায়গায় কিছু কাজ থমকে আছে। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৮৬ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে সময়মতো কাজ না করায় মূলত এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।
বা.প্র : আপনি সিটি করপোরেশন সম্প্রসারণের কথা বলে আসছেন। এখন রাজশাহী সিটি করপোরেশন অনেক ছোট। এরপরও বিভিন্ন সমস্যা রয়ে গেছে। সম্প্রসারণ হলে বিভিন্ন চাহিদাও বাড়বে। তখন তা কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
খায়রুজ্জামান লিটন : মূলত সরকারের কাছ থেকে অর্থ নিয়েই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিটি করপোরেশন সম্প্রসারণ হলে আমরা বাজেট বেশি দেব। সেই অর্থ দিয়েই আগামী পাঁচ বছর পিছিয়ে থাকা ওয়ার্ডগুলো এগিয়ে নেব। আগেও প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর উন্নয়নে সহায়তা করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন, আমি আশাবাদী।
বা.প্র : আপনার স্লোগান ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান’। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কাজ তো কর্মসংস্থান সৃষ্টি নয়। তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব হবে?
খায়রুজ্জামান লিটন : আপনি ঠিক বলেছেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি সিটি করপোরেশনের কাজ নয়। এটা সরকারের কাজ। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে এ দায়িত্ব আমি নিতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাজ সহজ করতে চাই। আমরা রাজশাহীতে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করেছি। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। আমরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ফ্রি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে। দেশ-বিদেশে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া বিসিক-২ একটি শিল্প প্রকল্প। সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তার চেষ্টা করছি। এই অঞ্চল কৃষিনির্ভর। বিশেষ করে এ অঞ্চলে আম, লিচু, আলু, টমেটো ও মাছ-মাংস প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়। এসব দিয়ে ভোগ্যপণ্য প্রস্তুত করে দেশ-বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির জন্য একটি হেল্প ডেস্ক খোলা হবে। যা তরুণ-তরুণীদের বিদেশে যেতে সহায়তা করবে। রাজশাহীকে রিভার সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ চলছে। ভারতের সঙ্গে নৌ চুক্তি হয়ে গেলে এ অঞ্চলে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বা.প্র : আগেও আপনি রাজশাহীকে রিভার সিটি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত তা দৃশ্যমান হয়নি। ভবিষ্যতে এর সম্ভাবনা কতটুকু?
খায়রুজ্জামান লিটন : করোনাসহ বিভিন্ন কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। নির্বাচিত হলে এবং জাতীয় নির্বাচনের পরই রাজশাহীকে রিভার সিটি হিসেবে গড়ার কার্যক্রম শুরু হবে।
বা. প্র : নির্বাচন সামনে রেখে নগরবাসীর উদ্দেশে আপনি কিছু বলতে চান?
খায়রুজ্জামান লিটন : আমরা রাজশাহীকে একটি ক্লিন ও গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। একই সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করতে চাই। এ জন্য জনগণের সহযোগিতা চাই।
বা.প্র : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
খায়রুজ্জামান লিটন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
বিডি প্রতিদিন/এমআই