রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ প্রণয়নের সময় চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এটি সংশোধন করা হবে। বদলে যাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নাম। রাজস্বনীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ও ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগে আলাদা নীতিমালার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে বলেও উপদেষ্টা জানান। রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বাড়ানোর সার্বিক বিষয় নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে প্রধান করে কমিটি করা হয়। কমিটির কাজের অগ্রগতি জানাতে গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ১২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ পৃথক করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ফাওজুল কবির খান বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডারের বিরোধ পুরোনো। এটিই আন্দোলন বা সমস্যার মূল কারণ। এ অধ্যাদেশটিতে দুটি মৌলিক ত্রুটি আছে। যারা এ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছেন তারা কিছুটা চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। রাজস্বনীতি বিভাগের যিনি সচিব হবেন সরকারের উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো কর্মকর্তাকে রাজস্ব বিভাগ সচিব পদে নিয়োগ করবেন। কিন্তু উপযুক্ত ব্যক্তি কে- এটি একটি সমস্যা। একই অধ্যাদেশের ৭-এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণ-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু সেখানে বলা হয়নি কোন ধরনের রাজস্ব। ভূমি রাজস্ব, না পাসপোর্টের রাজস্ব? আমরা এ অস্পষ্টতাগুলো দূর করার পরামর্শ দেব।
তিনি আরও বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের খবরদারি গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের নতুন যে দুটি বিভাগ হবে- রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়ন এবং রাজস্ব বিভাগের সচিব কে হবেন- এ জন্য নীতিমালা করতে হবে। যিনি সচিব হবেন তার নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন পদগুলোতেও নিয়োগের জন্য নীতিমালা করতে হবে, যেন রাজস্ব আহরণ আরও বেগবান হয়। রাজস্ব আয় অত্যন্ত কম। গ্রাহক হয়রানি ও কন্টেইনার জট যেন আমরা পরিহার করতে পারি।
তিনি বলেন, ফিল্ড ভিজিটগুলো হয়ে গেলে আমরা দ্রুত এই পরামর্শ জমা দেব। অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করব। সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যাপারে যে যোগ্যতা প্রয়োজন তার জন্য নীতিমালা তৈরি করব। অর্থ উপদেষ্টার কাছে এ সুপারিশ দেব। এরপর সংস্কার কমিশন থাকবে কি থাকবে না- অর্থ উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন।
ফাওজুল কবির বলেন, শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন; কিন্তু ব্যবসায়ীরা আমাদের জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কাজ খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। এনবিআর কর্মকর্তারা সরকারের আস্থায় নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। লাস্ট নরমাল মাসে রাজস্ব আদায় কত এবং তারা কী পরিমাণ সেবা দিয়েছিলেন- এগুলোও দেখব। এ কয়দিনে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের দুঃসাহস না করে, তা নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান যেন সরকারকে এভাবে বিব্রত করতে না পারে, ব্যবসা-বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে- এটা দেখাই আমাদের কাজ।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আমরা এরই মধ্যে শুল্ক ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, আয়কর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার কমিশন এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাঁচটি বৈঠক করেছি।
আমরা এখন মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম দেখব। আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট কার্যক্রম দেখব। এরই মধ্যে এনবিআর কর্মকর্তারা দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এই দুই মাসে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত এনবিআর, আয়কর এবং শুল্ক-ভ্যাট কর্মকর্তাদের হয়রানির শিকার হন। এনবিআর সংস্কারে তাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। কিছু কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কিছু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে।