সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ১০ দিনে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হয়েছে প্রায় ২.৯০ টাকা, যা বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
এ পরিবর্তনের পেছনে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বাড়া, আমদানি চাহিদা কমে যাওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্ক আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, যা বাজারে চাপ সৃষ্টি করেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই ডলারের দর কমেছে। গত সপ্তাহের শুরুতে যেখানে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ডলারের বিনিময়মূল্য দিচ্ছিল ১২২.৮০ টাকা ১২২.৯০ টাকা, সেখানে গতকাল এ দর নেমে আসে ১২০ টাকায়। এমনকি গত বৃহস্পতিবারও কিছু ব্যাংক ১২০.৫০ পর্যন্ত দাম দিলেও দিনের শেষে কোনো ব্যাংক ১২০ টাকা বেশি দিতে রাজি হয়নি। বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানির চাপ তুলনামূলকভাবে কম। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ মুদ্রানীতি অনুযায়ী ব্যাংকগুলো আমদানিতে সংযমী ভূমিকা নিচ্ছে, ফলে ডলারের চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর উদ্যোগ নেয়, যার ফলে বিনিময় হারে একটি স্বাভাবিক ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। যদিও এখনো পুরোপুরি বাজারনির্ভর হার কার্যকর হয়নি, তবে তার প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান শুল্ক আলোচনাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। আলোচনার ইতিবাচক ফলাফলের প্রত্যাশায় বিনিয়োগ ও রপ্তানিমুখী খাতগুলোতে আস্থা ফিরে আসছে, যা টাকার শক্তিমানের পেছনে একটি সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে ডলারের দরপতন ও টাকার শক্তিশালী হওয়ার যে ধারা দেখা যাচ্ছে, তা অর্থনীতির স্থিতিশীলতার পক্ষে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। তবে এ প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের রেমিট্যান্সপ্রবাহ, বৈদেশিক বাণিজ্যের গতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের ওপর।