রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলকে ঘিরে আশার আলো দেখা দিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আখ রোপণের অনুমতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সেই অনুমতির ফাইল এখন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে। সেখান থেকে অনুমতি পেলেই শ্যামপুর এলাকার আখ চাষিরা আখ রোপণ শুরু করবেন।
আখ রোপণের সময় নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। আখ চাষিরা আশা করছেন এর মধ্যে আখ চাষসহ চিনিকল চালুর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকায় শ্যামপুর চিনিকল জনমানব শূন্য ভূতুড়ে অবস্থায় রয়েছে। চিনিকল যন্ত্রপাতি-যানবাহন পাহারা দেওয়ার জন্য রয়েছে হাতে গোনা কয়েকজন গার্ড এবং দুই-একজন কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রংপুরের শ্যামপুর সুগারমিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগারমিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময় সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যেই কারখানাগুলো আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানালেও চার বছরে চিনি কলগুলো চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিগত সরকার।
বিগত সরকারের কাছে বন্ধ চিনিকলগুলো চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠালেও সে সময় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্ধ চিনি কল চালু করতে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছে।
বন্ধ ছয় চিনিকল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। অক্টোবর মাসে চিনিকল চালুর বিষয়ে ৪/৫টি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শ্যামপুর চিনিকল চালুর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে চিনিকল এলাকায় আখ চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আড়াই হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরের বছর ৪ হাজার একরে আখ চাষ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে এই বছরই চাষিরা আখ রোপণ করতে পারবেন। চিনিকল চালু রাখতে কমপক্ষে চার হাজার একর জমিতে আখ চাষের প্রয়োজন।
রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ হওয়ার সময় ৪৪৭ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতো। একজন এমডিসহ মোট ৪০ জনের মতো কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন। এদের অন্য চিনিকলে বদলি করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ১৬/১৭ জন গার্ড রয়েছে শুধু পাহারা দেওয়ার জন্য। দিনের বেলাতেই চিনি কলে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।
শ্যামপুর আখ চাষি ফেডারেশনের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোর এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে মাড়াই করা হবে বলে বলা হয়েছিল। বন্ধ মিল এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে যাওয়া একটি সমস্যা। এ কারণে শ্যামপুর এলাকায় আখ চাষ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
শ্যামপুরের আখচাষি সামছুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকার শ্যামপুর চিনিকল এলাকায় আখ রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি শুনে শ্যামপুর এলাকার আখ চাষিদের মাঝে খুশির বন্যা বইছে। শ্যামপুর চিনিকল এই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। আশা করি চিনি কল চালু হলে শ্যামপুর আবার তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই