আইসিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, এনবিআর বিলুপ্ত করে করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনা দুই ভাগে বিভক্ত করায় যে প্রতিবাদ হচ্ছে তা না করাই ভালো। যৌক্তিক দাবি থাকলে তা সরকারের কাছে পেশ করা যেতে পারে, তবে এ ধরনের প্রতিবাদ দুনীর্তির উদ্দেশ্যে হলে তা হবে দুঃখজনক। রাজস্ব ব্যবস্থাপনার এই সংস্কার অর্থনীতিতে সুফল দেবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এই ধরনের রাজস্ব কাঠামো রয়েছে। বিগত সরকার আমাদের মাথায় ১০৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ রেখে গেছে। বর্তমানে আমরা প্রতি বছর গড়ে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করছি। আগামীতে এ ঋণ পরিশোধের হার আরো বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ এর শর্ত অনুযায়ী ডলারের দাম বাজার ভিত্তিক করায় আমরা আশা করি টাকার মূল্য হারাবে না। তবে মাফিয়া চক্র যেন ডলার মজুদ করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। ইতোপূর্বে দেশে মাফিয়া ইকোনমির শাসন ছিল। এখন আশা করি তার অবসান হয়েছে। চোখের সামনে সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক লুণ্ঠিত হয়েছে। চোর-ডাকাতরা বৈদেশিক মুদ্রায় এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গোটা জাতি বেকায়দায় আছে। তবে পাচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনা চ্যালেঞ্জের হবে।
শনিবার এফডিসিতে আইএমএফ এর ঋণ ছাড় ও উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন আইসিবি’র চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংস্থা ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, প্রতীকী অর্থে আইএমএফ এর ঋণ একটি সার্টিফিকেট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এই ঋণ পাওয়া গেলে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেটারী সাপোর্টসহ নমনীয় ও অনমনীয় ঋণ প্রদানে উৎসাহী হয়। তবে অনেক সময় শুধুমাত্র আইএমএফের শর্ত পরিপালন করলেই উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ প্রদানে উৎসাহিত নাও হতে পারে। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, দক্ষতা, জবাবদিহিতা তৈরি করে দুর্নীতি রোধ, সুশাসন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা না হলে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ প্রদানে আগ্রহী হবে না।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ এর শর্ত প্রতিপালনে সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ভর্তুকি বাদ দিতে হয়, যা অনেক সময় জনস্বার্থের পরিপন্থি হয়ে থাকে। আইএমএফের ঋণ নিয়ে শর্ত পালন করতে গিয়ে এমন পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ নয়, যা দেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী হয়।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান বলেন, বিগত সরকারের আমলে যখন দেশের অর্থনীতিকে সামাল দেয়ার জন্য আইএমএফ এর এই ঋণ নেয়া হয়, তখনই দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা। তখন একদিকে দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর পরিস্থিতি, অন্যদিকে কতিপয় আমলা, ব্যবসায়ি ও রাজনীতিবিদদের নেক্সাসের মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্যসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছিল। বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে। ফার্নেস ওয়েল, কয়লা, স্ক্রাফ ভ্যাসেল, সার ও অন্যান্য পণ্য আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। দেশে তৈরি করার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিপুল টাকা ব্যয়ে বিদেশ হতে সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন প্রকার আইটি সেবা আমদানি করা হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত সরকারের তিন মেয়াদে লক্ষাধিক কোটি টাকা দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কোনো প্রকার বিদ্যুৎ না পেয়েই প্রদান করেছে। যা বিভিন্ন ভাবে বিদেশে পাচার করা হয়।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “আইএমএফ এর ঋণ ছাড় হওয়াতে উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রেসিডেন্সী ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ইকবাল আহসান, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহ ও সাংবাদিক আরিফুজ্জামান মামুন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত