রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার খায়রুজ্জামান লিটনসহ প্রায় ৭৪৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১২ মে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হামলার ঘটনায় সিজান নামের এক আন্দোলনকারী আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজহারে আওয়ামী লীগের ১৪৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করেছেন সিজান।
আর বাকি ৬০০ জন রয়েছেন অজ্ঞাতনামা। গুলি বর্ষণ এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম, দলবদ্ধভাবে পথরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণ আইনে মামলাটি রুজু হয়েছে।
মামলার বাদীর নাম মো. সিজান। তিনি নগরীর শাহমাখদুম থানার পবাপাড়া এলাকার সুলতান সরদারের ছেলে।
হাসিনার পতনের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ‘সিজানের নেতৃত্বে গত ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টায় সাত শতাধিক ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ জনতা নিয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন মোড় হতে স্বৈরাচার সরকার পতনের জন্য রাজশাহী শহরের দিকে যাত্রা শুরু করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলটি বোয়ালিয়া থানাধীন খরবোনা সাঁকো ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলীর কার্যালয়ের সামনে পাকা রাস্তার পাশে পৌঁছালে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামিরা তাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় আসামিরা হ্যান্ড মাইকে প্রকাশ্যে উচ্চস্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার কেউ যেন প্রাণে বাঁচতে না পারে সেই নির্দেশ দেন। তখন ৩ থেকে ৩৯নং আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ছুড়তে থাকেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৫নং আসামি আরমান আলীর কার্যালয়ের সামনে পাকা রাস্তার ওপর বাদীকে পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত আক্রমণ করে। ফলে তার উভয় পায়ের হাঁটুর নিচে গুরুতর জখম হয় এবং বাম হাতের কনুই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাৎক্ষণিক ৪০ হইতে ১৪৮নং আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ জনতার মিছিলকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ধারালো অস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল, জিআই পাইপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শান্তিকামী মিছিলের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত হয়ে সিজান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলে সিজানের শরীরে ২২টির মতো সেলাই লাগে।’
এ বিষয়ে আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, গত ১২ মে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এখন তদন্ত শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী মামলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলার অন্যতম আসামি রাবির সাবেক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা বর্তমানে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার লিটনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। লিটনসহ অন্যান্য নেতারা পলাতক রয়েছেন। তবে আনন্দ কুমার সাহাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন মামলার বাদী সিজান। তিনি বলেন, আমি মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে এসেছি। মামলা করলাম। এখন তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি চাই।
তবে প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা দাবি করেছেন, হাসিনার পতনের সময় আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর তিনি হামলা করেননি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন