রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

সারা জীবনই শরীরে গুলি বয়ে বেড়াতে হবে শান্তকে

বুক, পিঠ আর মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ। হাতে-পায়ে স্যালাইনের নল। ঢাকা মেডিকেলের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ১১ বছরের নিষ্পাপ শিশু শান্ত ইসলাম। চোখে-মুখে রাজ্যের হতাশা নিয়ে ছেলের পাশে বসে আছেন মা আসমা বেগম। মায়ের চোখের পানি থামছেই না। বাবা হাসপাতালের এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। কখনো চিকিৎসকের কাছে, কখনো সেবিকার কাছে। শান্তর অবস্থা জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী সার্জন পীযূষকান্তি মিত্র বলেন, শান্তর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। সপ্তাহখানেকের মধ্যে সে বাসায় ফিরতে পারবে। কিন্তু তার শরীরে যেসব ছররা গুলি রয়েছে, সেগুলো বের করা সম্ভব হবে না। কারণ, এগুলো বের করতে গেলে প্রচুর কাটাছেঁড়া করতে হবে। রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকবে। তাতে ভালোর চেয়ে খারাপই হবে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। তাই সারা জীবনই শান্তকে এসব গুলি শরীরে বয়ে বেড়াতে হবে। শরীরে থাকা এসব গুলি ভবিষ্যতে শান্তর জন্য ক্ষতির কারণ হবে কি না- জানতে চাইলে পীযূষকান্তি মিত্র বলেন, পচন ধরা কিংবা অন্য কোনো জটিলতার আশঙ্কা নেই। এসব বিষয়ে শান্তর মা আসমা বেগম বলেন, ওই দিন তো হরতাল অবরোধ আছিল না। তাইলে ক্যান আমার এ শিশু পোলার এই অবস্থা অইছে?'
ওয়ার্ড থেকে বের হওয়ার সময় শান্তর বাবা মোহাম্মদ সোবহান ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, 'আমরা তো শ্রমিক মানুষ। কাম কাইজ কইরা খাই। কুনো রাজনীতি করি না। আমগো বাচ্চা বা আমরা কি রাস্তায় বাইর অইতে পারুম না? নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারুম না। আমার নিজের দেশেই যদি ঠিকমতো নিরাপদে চলতে না পারি, থাইকতে না পারি, তাইলে যামু কই?'
শান্তর মা আসমা বেগম জানান, তারা থাকেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। সোবহান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে চা বিক্রি করেন। শান্ত রূপগঞ্জের একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা শেষ করে ছোট ভাই শাওনসহ ফকিরাপুলের গলিতে খালার বাসায় বেড়াতে এসেছিল। দুপুরে খালার বাসা থেকে প্লাস্টিকের বাটিতে করে বাবার জন্য ভাত নিয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু কাল হলো তার জন্য। আর নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারল না। শুক্রবার রাজধানীর আরামবাগে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের সময় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হয়।
এদিকে গতকাল বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ীতে ককটেলে আহত হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন রত্না বেগম। তিনি চার তলায় ভর্তি রয়েছেন। তার শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। শাহবাগে বিহঙ্গ পরিবহনে অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে পুলিশের এএসআই নুরুন্নবী ১৪ দিন ধরেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে রয়েছেন। আজ তার অপারেশন করা হবে। রাহাজুলকে চার তলায় রাখা হয়েছে। তার শরীরের কিছু অংশ শুকাতে শুরু করেছে। তবে তাকে অপারেশন করা হতে পারে। বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মাহবুব এখনো বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় ভর্তি রয়েছেন। তার মুখ, বুক, ঘাড় ও পায়ের পোড়া অংশ নতুন করে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। তৃতীয় তলায় বারান্দায় শুয়ে আছেন লক্ষ্মীবাজারে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হওয়া দর্জির দোকানি কামাল হোসেনের বাম হাতের পোড়া অংশ শুকালেও নড়াচড়া করতে পারছেন না। তার চিকিৎসা চলছে ধার করা টাকায়। কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে।
বার্ন ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়া থেকে আসা আবদুল আজিজ। তিনি সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা ছোড়ে। এতে তার শাসনালি পুড়ে যায়। শরীর মারাত্দকভাবে দগ্ধ হয়। তার ভাই মো. কামাল জানান, আজিজের শারীরিক অবস্থা মাঝেমধ্যে খুব খারাপের দিকে চলে যায়। তার জন্য একটি ইনজেকশন কিনতে হচ্ছে ৮ হাজার টাকা দিয়ে। এসব ইনজেকশন হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না। চিকিৎসক জানিয়েছেন শরীরের পোড়া অংশ দ্রুত শুকাতেই এসব ইনজেকশন দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর