দেখে মনে হবে একটি সাধারণ ক্যালকুলেটার। এ আর এমন কী! সাধারণ ক্যালকুলেটার তো ব্যবহার করতেই পারে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতেই সাধারণ ওই ক্যালকুলেটারই ভয়ঙ্কর জালিয়াতির মাধ্যম। ‘নিরীহ’ এই ক্যালকুলেটারের ভিতরেই বসানো আছে মোবাইল সিম কার্ড, যার মাধ্যমে পরীক্ষা হলে বসেই বাইরে থেকে পাওয়া যায় সব প্রশ্নের উত্তর! আঁতকে ওঠার মতোই এমন এক ভয়ঙ্কর প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ চক্রের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ছিল গতকাল। এ পরীক্ষাকে টার্গেট করে সুদূর বগুড়া থেকে এসেছিল একটি জালিয়াত চক্র। কিন্তু পুলিশের গোয়েন্দা তত্পরতায় ভেস্তে গেছে সেই চক্রের উদ্দেশ্য, ধরা পড়েছে চক্রের দুই সদস্য। জালিয়াত চক্রের আটককৃত দুই সদস্য হচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ও বগুড়ার ‘গুগল কোচিং সেন্টারে’র শিক্ষক ইশাদ ইমতিয়াজ হৃদয় এবং শাবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র, ছাত্রলীগ কর্মী আল আমিন। এ চক্রের মূল হোতা গুগল কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবির ওরফে তুহিন ওরফে জিহাদকে আটক করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তর সরবরাহে একটি বড় জালিয়াত চক্র জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে এরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষায় উত্তর সরবরাহ করছিল। এমন তথ্যে পুলিশ অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছিল। অনুসন্ধানে বগুড়ার ‘গুগল কোচিং সেন্টার’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিংয়ের আড়ালে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষায় উত্তর সরবরাহে জড়িত বলে জানতে পারে পুলিশ।
শাবির ভর্তি পরীক্ষায় এ চক্র একই কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, এমন খবরে মাঠে নামে সিলেট মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা।
সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নুরুল হুদা আশরাফী বলেন, এই ভয়ঙ্কর জালিয়াত চক্র চারটি ধাপে কাজ করে। প্রথমে শিক্ষার্থী সংগ্রহ, পরে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ, তৃতীয় ধাপে প্রশ্নপত্রের সমাধান এবং শেষ ধাপে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহ করা হয়। এ কাজে সাধারণ ক্যালকুলেটারের মতো দেখতে একটি বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এ ডিভাইসে সিমকার্ড লাগানো। বাইরে বসে মোবাইল ফোন দিয়ে পরীক্ষার হলে বসে থাকা পরীক্ষার্থীদের কাছে সরাসরি ওই ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করা হয়।আটককৃত দুজন পরীক্ষার্থী সংগ্রহের কাজে জড়িত ছিল জানিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একেকজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহের জন্য ৫-৬ লাখ টাকা করে নেওয়া হতো। আটককৃতরা প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর সরবরাহে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরা এই অপকর্মে সফল হয়েছে বলেও জানিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এসএমপি’র সহকারী কমিশনার নুরুল হুদা আশরাফী বলেন, জালিয়াত চক্র কোনোভাবে পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নপত্র বাইরে নিয়ে আসত। এরপর ওই প্রশ্নপত্র দেখে নির্দিষ্ট পরীক্ষার্থীর ডিভাইসে উত্তর পাঠানো হতো। ওই ডিভাইসে উত্তর মেসেজ আকারে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।