মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে চট্টগ্রাম

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পরিচালিত নগরের জামালখান কুসুম কুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এক হাজার ২০ জন শিক্ষার্থী ও ৩৩ জন শিক্ষক আছেন। ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যান’ অনুযায়ী ভবনটিতে শিক্ষার্থী অনুপাতে চারটি সিঁড়ি থাকার কথা। কিন্তু আছে মাত্র একটি। নেই জরুরি নির্গমন। সরকারি চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রায় দুই হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ৫০ জনের বেশি। এটি পাঁচতলা ভবন। ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যান’ মতে এ ভবনে শিক্ষার্থী অনুপাতে চারটি সিঁড়ি থাকার কথা, আছে দুটি। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন তালিকায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানই অতিঝুঁকিপূর্ণের তালিকায়। এভাবে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চরম পর্যায়ের অগ্নিঝুঁকিতে আছে। এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। অনেকটা মৃত্যু হাতে নিয়েই দিন পার করছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ে বস্তিতে অগ্নিকান্ডে  আটজন, রাজধানী ঢাকার চকবাজারে ৭১ জন এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে  ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দেশের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলোর বিষয়টি সামনে আসে।

অভিযোগ আছে, অগ্নি নির্বাপণের প্রধান মাধ্যম হলো পানি। কিন্তু নগরে ক্রমেই পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন, পানির ভাউচারসহ প্রয়োজনীয় সক্ষমতা থাকলেও পানি না পাওয়া, সরু সড়ক-উপসড়ক, গলি উপ-গলির কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ফায়ার সার্ভিস ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে সমগ্র চট্টগ্রামে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ, অতিঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে ভাগ করে। এ ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় চট্টগ্রামের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোও আছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, ‘নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে আমাদের একজন করে পরিদর্শক আছেন। পরিদর্শনে দেখা যায়, কোথাও ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যান’ কার্যকর নেই। প্রায় সবকটি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানেই অভিন্ন অবস্থা। এসব প্রতিষ্ঠান অগ্নিঝুঁকিতে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেই আগে উদ্যোগী এবং সচেতন হতে হবে।’ চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভবনগুলো পুরনো। এসব ভবনে ফায়ার সেফটি প্ল্যান যথাযথ বাস্তবায়ন অনেকটাই অসম্ভব। নতুন করে নির্মাণ করা ভবনগুলোতে ফায়ার সেফটি প্ল্যানের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যে কোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের সচেতনতার আওতায় আনা হয়েছে। জানা যায়, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১২টি, চসিক পরিচালিত কলেজ ২০টি, বালক উচ্চবিদ্যালয় ৮টি, বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ২৫টি, বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১৪টি, কিন্ডারগার্টেন আছে ৯টি। নগরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ২১৭টি, সরকারি উচ্চবিদ্যালয় আছে ১১টি, কলেজ আছে ৭টি। তাছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমপিওভুক্ত হাইস্কুল ১০৭টি, মাদ্রাসা ২৫টি, কলেজ ১৭টি এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ আছে ১১৮টি। আবার নন এমপিওভুক্ত হাইস্কুল আছে ১টি, মাদ্রাসা ১৯টি, কলেজ ১৬টি এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১২টি। কওমি মাদ্রাসা আছে ৩২টি, কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা দেড় শতাধিক। সবমিলিয়ে নগরের প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬০ জন শিক্ষার্থী, হাইস্কুলগুলোতে ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৮১ জন, কলেজগুলোতে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৩ জন, মাদ্রাসায় ১৭ হাজার ৪৩ জন এবং কওমি মাদ্রাসায় ৮ হাজার ৬৫ জন শিক্ষার্থী আছে। তাছাড়া প্রতিটি কিন্ডারগার্টেনে গড়ে ২০০ করে শিক্ষার্থী আছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় প্রায় ৫০৪টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা তুলনামূলক ভালো হলেও বেসরকারিগুলোর অবস্থা চরম নাজুক বলে জানা যায়।

সর্বশেষ খবর