বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফাইলে আটকা অর্থনৈতিক অঞ্চল

খুলনায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা । চিঠি চালাচালিতে ৩ বছর পার

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ফাইলে আটকা অর্থনৈতিক অঞ্চল

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় খুলনার দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ এখনো আটকে আছে কাগজ-কলমেই। একটি অঞ্চল করার জন্য ২০১৭ সালে বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলা মৌজায় ৫৯৪ একর জমি প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দীর্ঘদিনেও ওই জমি অধিগ্রহণের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আরেকটি অঞ্চল হওয়ার কথা তেরখাদা উপজেলার কোলা পাটগাতি মৌজায়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে জমি চিহ্নিতকরণের কাজই শুরু হয়নি।

জানা যায়, শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৫ সালে খুলনার বটিয়াঘাটা এবং তেরখাদায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এতে সম্মতি হয়। এরপর জমির নকশা, খতিয়ান, মূল্য নির্ধারণী তথ্য সংগ্রহ করতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসন বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলা মৌজায় ৫৯৪ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয়নি মন্ত্রণালয়।

বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে জায়গা নির্ধারণ, সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প গ্রহণ ও জমি অধিগ্রহণসহ এখনো অনেক কাজ বাকি। ফলে সব কিছু গুছিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ জানিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠন ও শিল্প উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, খুলনায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ অন্য সব কাজও ঝুলে রয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, বটিয়াঘাটা ও তেরখাদা উপজেলায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রাথমিকভাবে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য অনুমতি চেয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন কাজের গতি বাড়াতে জেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া আগামী মাসে বেজা চেয়ারম্যানের খুলনায় আসার কথা রয়েছে। তখন এ বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে।

জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার তথ্য অনুযায়ী, বটিয়াঘাটার ৫৯৪ একর জমির মধ্যে প্রায় ২১২ একর খাসজমি। বাকি ৩৮২ একর জমির মধ্যে কিছু অংশ বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। আর কিছু জমিতে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে নৌ ও সড়ক পথে সংযোগ তৈরিতে আরও কিছু জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ২৫০-৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে বটিয়াঘাটা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য চিহ্নিত করা জমির একটি ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকায় তেরখাদায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি চিহ্নিত করার কাজই শুরু হয়নি। জানা যায়, জমি অধিগ্রহণের পর দুই স্থানে সম্ভাব্যতা জরিপ শুরু করবে বেজা। প্রকল্প তৈরির পর সরকারি, বেসরকারি অথবা দাতা সংস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অব্জল তৈরির কাজ শুরু হবে।

বেজার যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খুলনার অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য এখনো জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়নি। কয়েকটি জায়গায় কিছু জমি বন্দোবস্ত দেওয়া রয়েছে। কিছু জমিতে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। তবে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি অনুমোদনের পরই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জায়গা নির্ধারণ, সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রকল্প গ্রহণ ও জমি অধিগ্রহণসহ এখনো অনেক কাজ বাকি। ফলে সবকিছু গুছিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে।

এদিকে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, খুলনায় অর্থনৈতিক জোন স্থাপন হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। মোংলা বন্দর গতিশীল হবে। সর্বোপরি এ অঞ্চলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনার ও বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সময়ে এ এলাকা পরিদর্শন করে বিনিয়োগে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে রয়েছে খুলনার দুই অর্থনৈতিক অঞ্চল। দেশের অনগ্রসর অঞ্চলের উন্নয়নে সরকার এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও দীর্ঘসূত্রতায় হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর