শনিবার, ১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বুড়িমারী বন্দরে আটকা শত শত পণ্যবাহী ট্রাক

ভারতীয় কাস্টমসে অনলাইন জটিলতা

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলাধীন বুড়িমারী স্থলবন্দরে গত ৬ দিন ধরে ভারতে রপ্তানির জন্য পণ্য বোঝাই শত শত ট্রাক প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের ওপারে ভারতীয় কুচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে গত ২৬ মে থেকে অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহারকারী বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করলেও স্থানীয়ভাবে তাদের কিছু করার নেই বলে দাবি করেন। কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কুচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর কাস্টমসকে ভারতীয়  রাজস্ব বিভাগ কম্পিউটারাইজ সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসতে গত ২৬ মে থেকে ‘এএসওয়াই কুডা’ সিস্টেম চালু করেছে। এই সিস্টেম চালু করায় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সাহা জানান, বুড়িমারী স্থলবন্দর অনলাইন সেবা কার্যক্রম অনেক আগে থেকে চালু        আছে। কিন্তু চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস ম্যানুয়ালি কার্যক্রম করত। তারা এখন অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করায় রপ্তানি কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলেও আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানির জন্য রাজধানীয় ঢাকার মালিবাগ এলাকার মেসার্স মাড়–তি ইন্টারন্যাশনালের পণ্য বোঝাই ৬০টি ট্রাক, গাজীপুর কোনাবাড়ী এলাকার মেসার্স ক্যাচান ট্রেডিংয়ের ৪০টি ট্রাক রপ্তানি পণ্য নিয়ে গত ২৬ মে থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় অপেক্ষায় রয়েছে। এই দুই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মতো প্রাণ-আরএফএলসহ বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের শত শত পণ্য বোঝাই ট্রাক বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এ কারণে একদিকে যেমন চরম যানজট সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে ট্রাক মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়ার অর্থ গুনতে হচ্ছে রপ্তানিককারক ব্যবসায়ীদের। ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমসের অনলাইন সেবার কার্যক্রম চালুর জটিলতার কারণে বাংলাদেশি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে এই ভোগান্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের জন্য আরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি কার্যক্রম সচল রেখেছে ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও বেশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী মেসার্স আরএন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবীর সওদাগর বলেন, ‘আমার কয়েকজন রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীর দুইশতাধিক গার্মেন্ট ঝুট বোঝাই ট্রাক কয়েকদিন ধরে ভারতে রপ্তানির জন্য অপেক্ষায় আছে। বিষয়টি কাস্টমসকে বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

রাজধানী ঢাকার মালিবাগ এলাকার রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন প্রতিদিন দুই হাজার টাকা ডেমারেজ দিতে হচ্ছে ট্রাক মালিকদের। ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমসের অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করার আগে অন্তত যেসব ট্রাক বন্দরে অপেক্ষমাণ রয়েছে। এসব গাড়ি ভারতের রিসিভ করা উচিত। এই বিষয়ে বাংলাদেশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

জানতে চাইলে বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সাহা ও রাজস্ব কর্মকর্তা প্রভাষ কুমার রায় ভারতে রপ্তানির জন্য কয়েকশ গাড়ি অপেক্ষমাণ থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারাইজড অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টমস ডাটা (এএসওয়াইকুড) সফটওয়ার চালু করায় রপ্তানির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। রপ্তানিকারক ও স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিষয়টি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আমাদের হাতে কিছু করার ক্ষমতা নেই।’

রংপুর বিভাগীয় কাস্টমস কমিশনার আহসানুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইলের সুইচ অব থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 

                                                               

সর্বশেষ খবর