দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারিত হবে। গতকাল সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে অ্যাটকোর সদস্য ও ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘আগামীকাল বৃহস্পতিবার আমাদের টেকিনিক্যাল প্রতিনিধিরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসবেন এবং টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো দূর করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আশা করি দুই-তিন মাসের মধ্যে আমরা পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের সব টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করতে পারব- এটি আমাদের প্রত্যয়।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সম্পর্কে আমাদের কমিটমেন্ট আছে। আমরা অ্যাটকোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কমিট করেছি যে আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে যাচ্ছি এবং যাব। ইতিমধ্যে অনেকেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।’ ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমাদের কেবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করতে হবে। সেটির ব্যাপারে তারা অলরেডি কেবল অপারেটরদের চিঠি দিয়েছেন। ডিজিটাল হওয়ার পর আমাদের চ্যানেলগুলো পে-চ্যানেল হিসেবে কিছু সুযোগ পাওয়ার সুবিধা সৃষ্টি হবে। ফলে আমাদের কিছু সংকট সমাধান হবে।’
অ্যাটকোর সিনিয়র সহসভাপতি ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সব কটি চ্যানেলই টেস্ট ট্রান্সমিশনে আছে। টেস্ট ট্রান্সমিশন চলাকালীন ফাইবার কানেকটিভিটি যেহেতু ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, উন্নয়ন কর্মকা-সহ নানা কারণে মাঝে মাঝে ফাইবার কাটা পড়ার কিছু ঘটনা ঘটেছে। এই কনসার্নগুলো তাদের ব্যক্ত করেছি।’
তিনি বলেন, স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বাড়াতে সম্মত হয়েছে। দু-তিনটা বিকল্প লাইন থাকলে, যাতে কোনো একটা অ্যাকসিডেন্টলি কাটা পড়লেও কোনো অসুবিধা না হয়। মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সর্বশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত একটি স্যাটেলাইট। শুধু কমিউনিকেশন ফাইবার কানেকটিভিটি সমস্যাটা দূর হলে আমাদের বর্তমান স্যাটেলাইট সম্পূর্ণ ডিসকানেক্ট করে দেব। এতে ৩০ থেকে ৬০ দিনের বেশি সময় লাগবে না বলে মনে হয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান তথ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিরাজমান অনেক সমস্যা সমাধান হতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পেন্ডিং ছিল জন্মের ক্রমানুযায়ী টেলিভিশনের ডিস্ট্রিবিউশন সিরিয়ালের বিষয়টি। এটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলাম, এটা হয়নি। এখন সেটি কার্যকর হয়েছে।’
অ্যাটকোর এই সিনিয়র সহসভাপতি বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড যাতে সম্প্রচার করে এ ব্যাপারে সরকার কড়াকড়ি নির্দেশ জারি করেছে। তাদের চাপ দেওয়া এবং আলোচনা অব্যাহত আছে। সব কটি বিদেশি চ্যানেল অচিরেই ক্লিন ফিড প্রচার করবে, যেখানে বাংলাদেশের কোনো বিজ্ঞাপন ও বিদেশি কোনো বিজ্ঞাপন ওভারফ্লো করবে না।’
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘টেলিভিশনের সম্প্রচারে ইতিমধ্যে যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে জন্য তারা (অ্যাটকো নেতারা) সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন চ্যানেলে বিদেশি সিনেমা দেখানো হচ্ছে, এতে আমাদের কলাকুশলীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ডাবিংকৃত সিরিয়াল দেখানো হচ্ছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে নানা ধরনের সুপারিশ এসেছে।’ তিনি বলেন, শুধু বিটিভি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারে গেছে। ইতিমধ্যে ছয়টি টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা গ্রহণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বাকি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো শিগগিরই যাতে এ সেবা গহণ করেÑ এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শিগগিরই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য সচিব মো. আবদুল মালেক, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশিদ, বাংলাভিশনের চেয়ারম্যান আবদুল হক, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, কাজী মিডিয়া লিমিটেডের (দীপ্ত টিভি) পরিচালক কাজী জাহিন এস হাসান প্রমুখ।
