শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

৬০ শতাংশই তরুণ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মানসিক রোগ বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী সেবা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে সিংহভাগ রোগীর বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাছাড়া বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীর অনেককেই অন্তবিভাগে ভর্তি করাতে হয়। পক্ষান্তরে, চিকিৎসা নিতে আসাদের অধিকাংশই গ্রামের এবং অনেকেই শিকার অপচিকিৎসার। চমেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়।  

জানা যায়, চমেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে শয্যা আছে ৫৩টি। কিন্তু প্রতিদিন এ ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থাকে ৮০-১০০ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই তরুণ-তরুণী। তাছাড়া সেবা নিতে আসা রোগীর অধিকাংশই তৃণমূলের। চমেক হাসপাতালের মানসিক বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. তারেক আবেদীন বলেন, ‘প্রতিনিয়তই মানসিক রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা ও ভর্তি হওয়া রোগীর প্রায় ৬০ শতাংশই তরুণ বয়সী, বিষয়টি উদ্বেগের। এদের অধিকাংশই আবার অপচিকিৎসার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অনেকে আবার তাবিজ, ঝাড়ফুঁক, পানি পড়ার মতো অপচিকিৎসায় বিশ্বাস করে। ফলে রোগীর অবস্থা উল্টো খারাপ হয়ে যায়। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে নিয়ে এলে রোগটি শরীরে আর স্থায়ী হতো না।’ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানসী সেন (২২) বলেন, ‘মা-বাবা আয়োজন করে বিয়ে দেন। বিয়ের চার দিনের মাথায় হঠাৎ এক দিন রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার শুরু করি। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ধারণা হয়তো জিনের বাতাস লেগেছে। পাড়ার এক বৈদ্যের কাছে নিয়ে গেলে তিনিও জানান সেটি। শুরু করে দেন ঝাড়ফুঁক, পানি পড়ার মতো নানা অপচিকিৎসা। প্রায় ২০দিন এসব চিকিৎসা চলার পর মানসীর অবস্থা উল্টো খারাপ হয়ে যায়। পরে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মানসিক বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা মানসীর পরিবারকে জানান, তার যে সমস্যা তা অনেক প্রকার মানসিক রোগের একটি। কোনো জ্বিন বা ভূত নয়। শুরুর দিকে তাকে মানসিক রোগের চিকিৎসা শুরু করা হলে তিনি এতদিনে ভালো হয়ে যেত। নানা অপচিকিৎসার কারণে তার শরীরে মানসিক রোগটি প্রাথমিক অবস্থা থেকে স্থায়ী হয়েছে। 

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল যুগেও এখনো কিছু মানুষ চিকিৎসকদের চিকিৎসার চেয়ে ঝাড়ফুঁক, পানি পড়ার মতো অপচিকিৎসায় আস্থা রাখেন। ফলে তারা কোনো সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ছুটেন ভিন্ন অপচিকিৎসায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসব চিকিৎসার কোনো ভিত্তি নেই। এসব অপচিকিৎসার কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ হয় বেশি। অনেক সময় বেশি বিলম্ব হওয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্তও ঘটতে পারে। এমন সমস্যা থেকে উত্তরণে মানুষের মাঝে সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর