শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সুনামগঞ্জে ঘরে ঘরে সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রশাসনের যত উদ্যোগ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

করোনাভাইরাস জনিত কারণে চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জে শুরু হয়েছে বছরের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ বোরো ধান কাটার মৌসুম। প্রতিকূল এ পরিস্থিতিতে ‘নিরাপদে কাটব ধান, দেশে দেব খাদ্য জোগান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কৃষক, কর্মহীন ও শ্রমজীবীবান্ধব নানা কর্মসূচি হাতে নিয়ে বাস্তবায়ন করছে প্রশাসন। প্রশাসন সূত্র জানায়, দীর্ঘ সময় ধরে ঘরে অবস্থান করা জনগণ যাতে কষ্টভোগ না করে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সবার দোরগোড়ায় খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জন্য ওয়ার্ড পর্যায় থেকে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র কর্মহীন, শ্রমহীন, অসহায় মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ‘একটি মানুষও যেন না খেয়ে না থাকে এবং কেউ যেন একাধিক জায়গা থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত না হয়’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে মূলমন্ত্র হিসেবে ধরে  খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অগ্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী জেলায় তিন পর্যায়ে মোট ১ লাখ ৪ হাজার ৩৭৭টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রদত্ত সহায়তার মধ্যে রয়েছে- ১০১১ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন চাল এবং ৯৭ হাজার ৫৫২ পরিবারের মধ্যে ৩৯ লাখ ১১ হাজার ১১৫ টাকা নগদ অর্থ। এ কার্যক্রমের আওতায় পরিবারপ্রতি ১০ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু এবং ১ কেজি ডাল বিতরণ করা হয়েছে, যা চলমান। এ ছাড়া সরকারের জনবান্ধব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১০ টাকা কেজি দরে ৯১ হাজার ৫৯০ জন হতদরিদ্র্যের মধ্যে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। জেলার চারটি পৌরসভায় ওএমএস এবং মিল্কভিটা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত শিশুখাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চলমান। এ ছাড়া জেলায় টিসিবির ১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় কার্যক্রম অব্যাহত। উৎপাদনকারী কৃষক ও উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে স্থানীয় উৎপাদিত সবজি ও ফলমূল ত্রাণ হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে। খাদ্যসহায়তা উদ্যোগ পরিকল্পনামন্ত্রী, সংসদ সদস্যগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে সম্পাদিত হচ্ছে। জনসম্মুখে ত্রাণ গ্রহণে সংকোচবোধ করা মধ্যবিত্তদের ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেবে প্রশাসন’ এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খাদ্যসহায়তার হটলাইন ৩৩৩ ও ৯৯৯ নম্বরে সহায়তার জন্য কেউ ফোন করলে তার বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে প্রশাসন। অপরদিকে, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১২০টি পিপিই, চার হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক, ৪০টি চশমা, ৭৫টি টেস্ট কিট এবং ৮টি ডিজিটাল থার্মোমিটার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রদান করা হয়েছে। সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ৬ হাজার ৮০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। ব্র্যাকের উদ্যোগে দিরাই উপজেলায় ৫ হাজার ৫৪৪ পরিবারের মধ্যে ১৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে মোট ২১ হাজার ৫০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চলা লকডাউনের কারণে প্রতিটি অসহায় মানুষের ঘরে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়াই বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মুখ্য প্রতিপাদ্য। এ প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়ন করতে ব্যাপক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর