মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে টিউশন ফি আদায়

► শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মানছে না প্রতিষ্ঠানগুলো
► অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ

আকতারুজ্জামান

শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে টিউশন ফি আদায়

এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশনকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জিম্মি করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো স্কুল থেকে মেসেজ পাঠিয়ে সাফ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বকেয়া টিউশন ফি পরিশোধ না করলে রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়া হবে না। করোনার এ সংকটময় মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমন বার্তা পেয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অথচ সম্প্রতি শিক্ষাবোর্ডের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি থাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফির জন্য চাপপ্রয়োগ করা যাবে না। শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁইয়া এই লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন। তথ্যমতে, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন গত ১৬ আগস্ট শুরু হয়েছে, চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, রেজিস্ট্রেশনের সময় এসে চাপ দিয়ে বকেয়া সব টিউশন ফি কৌশলে আদায় করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এভাবে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবদুল মজিদ সুজন জানান, স্কুল থেকে জানানো হয়েছে চলতি আগস্ট পর্যন্ত টিউশন ফিসহ অন্য চার্জ পরিশোধ না করলে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফওজিয়া এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের বেতনের সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ১৬৩ টাকা। মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগেই গত মার্চ পর্যন্ত টিউশন ফি পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের জন্য মেসেজ পাঠিয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। মেসেজে বলা হয়েছে, আগস্ট পর্যন্ত যাবতীয় টিউশন ফি পরিশোধ করতে হবে। অভিভাবক বলেন, সে হিসেবে আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ৯০৫ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে আমাকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এভাবে চাপ প্রদান করলে সব বকেয়া একবারে পরিশোধ করা তো সম্ভব নয়। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ প্রতিবেদককে বলেন, দক্ষিণখানে প্রতিষ্ঠানের এ শাখায় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোবাইলে পাঠানো মেসেজে বলা হয়েছে- যারা আগস্ট পর্যন্ত টিউশন ফি ও রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করেনি তাদের তা পরিশোধ করতে হবে। অপর এক মোবাইল মেসেজে বলা হয়েছে, যার (যেসব শিক্ষার্থীর) আগস্ট পর্যন্ত বেতন পরিশোধ থাকবে না তার রেজিস্ট্রেশন হবে না। এ প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক প্রতিবেদককে বলেন, করোনার কারণে সিংহভাগ অভিভাবক স্কুল-কলেজের টিউশন ফি পরিশোধ করছেন না। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও চলতে পারছে না। বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, যেসব অভিভাবকের সামর্থ্য রয়েছে তাদের উচিত টিউশন ফি পরিশোধ করা। আর যাদের সামর্থ্য কম, যারা একটু সংকটে রয়েছেন তাদেরও উচিত ধাপে ধাপে টিউশন ফি পরিশোধ করা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর