শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

শিল্পকলায় বৈরী আবহাওয়ায়ও প্রাণের উচ্ছ্বাস

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

শিল্পকলায় বৈরী আবহাওয়ায়ও প্রাণের উচ্ছ্বাস

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মুখে সবকিছুর মতো স্থবির ছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গনও। এ অবস্থায় প্রায় সাত মাস পাঁচ দিন অর্থাৎ ২২০ দিন বন্ধ ছিল সংস্কৃতির সূতিকাগার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নাট্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে গতকাল খুলে দেওয়া হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির সব মিলনায়তন। আর এর মধ্য দিয়ে আবারও সরব হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন। দীর্ঘদিন পর আলোর ঝলকানি ও সংস্কৃতিকর্মীদের শৈল্পিকতায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল একাডেমির মঞ্চগুলো। জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল- নাট্যকর্মীদের সংলাপ আর অভিনয়শৈলীতে নান্দনিক আবহে অন্য এক রূপ পায় এ মিলনায়তনগুলো। আর সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শ্রৎ উৎসবের রঙে প্রাণের উচ্ছ্বাস তৈরি হয় একাডেমিজুড়ে।

মঞ্চে নাটক দেখা ও অনুষ্ঠান উপভোগের ক্ষেত্রে হেমন্তের বেরসিক বৃষ্টির চোখরাঙানিও শিল্পানুরাগী দর্শকদের ঘরের চার দেয়ালে বন্দী রাখতে পারেনি; যার কারণে ছুটির দিনের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে আনন্দের ফল্গুধারা। শিল্পী ও দর্শকের কোলাহলে ছুটির দিনের সন্ধ্যাটা মুখরিত ছিল শিল্পের আলোয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে হেমন্তের আকাশে যেমন ছিল বর্ষার বারিধারা তেমনি শিল্পালোকের ঝরনাধারায় প্রবাহিত ছিল শিল্পাঙ্গন। দীর্ঘ বিরতির পর গত সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় পালাকারের নাটক ‘উজানে মৃত্যু’। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটির নির্দেশ্নায় ছিলেন শামীম সাগর। অভিনয় করেছেন দলের নিয়মিত শিল্পীরা। একই সময়ে পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় জাগরণী থিয়েটার প্রযোজিত নাটক ‘রাজার চিঠি’। রবীন্দ্রনাথের শাহজাদপুরের স্মৃতিধন্য কাহিনি নিয়ে নাটকটি রচনা করেছেন মাহফুজা হিলালী আর নির্দেশ্না দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন দলটির নিয়মিত শিল্পীরা। আর একই সময়ে স্টুডিও থিয়েটার হলে শুরু হয়েছে খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা এ কে এ কবীরের দুই দিনব্যাপী স্মরণানুষ্ঠান। দলের নিজস্ব প্রযোজনার নাটক ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’, মৈত্রী থিয়েটারের ‘চা অথবা কফি’, উৎস নাট্যদলের ‘পতাকায় বঙ্গবন্ধু’ এ তিনটি নাটকের অংশ্বিশেষসহ এ উৎসবে আরও থাকছে গান, কবিতা ও স্মৃতিচারণা। অন্যদিকে বিকালে নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শ্রৎ উৎসবের আয়োজন করে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী। অসিত বিশ্বাসের এস্রাজবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শ্রৎ নিয়ে হেমন্তকালের এ আয়োজন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, দেশাত্মবোধক গান, যন্ত্রসংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য দিয়ে সাজানো ছিল শ্রৎ উৎসব। অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশ্ন করেন শ্রাবণী গুহ রায়, নবনীতা জাহিদ চৌধুরী, রত্না সরকার ও এস এম মেজবাহ উদ্দিন। দ্বৈতসংগীত পরিবেশ্ন করেন তাসনিম চৌধুরী প্রমা ও নওশীনস ফারিয়ান ¯ন্ডেœহা। দলীয় সংগীত পরিবেশ্ন করে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী ও সমস্বর শিল্পী গোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশ্ন করে নাচের দল স্পন্দন ও নৃত্যাক্ষ। একক আবৃত্তি পরিবেশ্ন করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশ্ন করে মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তৃতা করেন সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। সুরের মূর্ছনা, নৃত্যের ঝঙ্কার ও আবৃত্তির দীপ্ত উচ্চারণে হৈমন্তী সন্ধ্যায়ও গোটা মিলনায়তনে মূর্ত হয়ে ওঠে শারদীয় আবহ। দীর্ঘদিন পর মঞ্চে নাটক উপভোগ ও শিল্পীদের নৃত্য-গীতের ঝঙ্কার দর্শকদের মধ্যে ভিন্ন এক ভালোলাগার সৃষ্টি করে। ভার্চুয়াল জগৎ ছেড়ে মিলনায়তনের অনুষ্ঠান যে অনেক বেশি উপভোগ্য তার প্রমাণ পাওয়া গেছে দর্শকদের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিতে।

অন্যদিকে একই সময়ে নাটক সরণি খ্যাত বেইলি রোডের মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সৌখিন থিয়েটারের চতুর্থ প্রযোজনার ‘ধূম্রজ্বালা’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন। অপূর্ব কুমার কুন্ডু রচিত এ নাটকটির নির্দেশ্নায় ছিলেন হামিদুর রহমান পাপ্পু। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন দলটির নিয়মিত শিল্পীরা।

সাংস্কৃতিক এ কর্মযজ্ঞে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই নিজ নিজ প্রযোজনায় রূপদান করেছে নাটকের দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর