সময়ের পরিবর্তনে আবহমান বাংলার অনেক কিছুরই এখন দেখা মেলে না। গ্রামীণ জনপদের অনেক ঐতিহ্য এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে ‘পলো বাওয়া’ উৎসবও বিরল। তবুও শিকড়ের টানে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রতি বছরই ঘটা করে পালন করা হয় এ উৎসব। দিনব্যাপী আনন্দ-উৎসবে উপজেলার গোয়াহরী বড় বিলে দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় মাছ আহরণ করেন শৌখিন শিকারিরা। এ সময় গ্রামীণ জনপদে বিরাজ করে ভিন্ন আমেজ। সরেজমিন সকালে দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়হরী বড় বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকারের পলো, জাল, কুচা, কলুই, কলইদঁড়ি, ডেগ-ডেস্কি, বড় জালসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে বিলের পাড়ে জড়ো হয়েছেন শিকারিরা।

 বড়দের সঙ্গে শিকারে অংশ নিতে দেখা যায় গ্রামের কিশোর-কিশোরীদেরও। পলো বাওয়া উৎসব উপভোগ করতে বিলের পাশর্^বর্তী মাঠে অবস্থান করেন গাঁয়ের শতাধিক নারী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা উৎসুক জনতা। উৎসবকে কেন্দ্র করে এ সময় দেশে ফেরেন গ্রামের প্রবাসীরাও। ‘পলো বাওয়া’য় বিলে নামার আগে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে দফায় দফায় বৈঠক করেন মুরব্বিরা। বৈঠক শেষে নির্দিষ্ট শিকারিদের ‘শনাক্ত চিহ্ন’ হলুদ রঙের বিশেষ ফিতা সরবরাহ করা হয়। পরে নির্ধারিত সময়ে একযোগে গ্রামের চার পাড়ার প্রায় ৪ শতাধিক শিকারি পলো নিয়ে নামেন মাছ আহরণে। দীর্ঘ সময় ধরে বিলের হিমশীতল পানিতে মাছ ধরায় মেতে ওঠেন তারা। এক সময় ধরা পড়ে বোয়াল, রুই, গজার, শোলসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। ধরার পর শিকারিদের আনন্দ চিৎকারে মুখরিত হয়ে ওঠে বিলের আশপাশ। বড় মাছ শিকারের পর জাল দিয়ে টেংরা-পুঁটি ধরতে নামে আরেক গ্রুপ শিকারি।

মাছ শিকারে আসা সিলেট জালালাবাদ টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের প্রিন্সিপাল হাসমত উল্লাহ বলেন, যুগ যুগ ধরে আমাদের বিলে এ উৎসব পালন করা হচ্ছে। প্রতি মাঘ মাসের ১ তারিখে করা হয়। এবার এক দিন পিছিয়ে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য গোলাম হোসেন বলেন, বংশ পরম্পরায় এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছি আমরা। নির্ধারতি সময়ের এক সপ্তাহ আগ থেকে গ্রামে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। প্রতি বছর সুশৃঙ্খলভাবে ‘পলো বাওয়া’ উৎসব পালিত হয়।