‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য মারা যাচ্ছেন। ২০২০ সালে পুলিশের বিভিন্ন পদের ৪৫৭ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে ২০৮ জন জীবন উৎসর্গ করেছেন কর্তব্যরত অবস্থায়। জীবন উৎসর্গ করেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে পুলিশ। আমি নিহত ও মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে (পিএসসি) ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার মতো চরম ত্যাগ স্বীকার দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যরা যে নজির স্থাপন করেছেন, এ জন্য সারা দেশ আজ উপকৃত।এর আগে পিএসসিতে নির্মিত অস্থায়ী পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মন্ত্রী। পর্যায়ক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবার-পরিজনেরাও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় একটি চৌকস পুলিশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। সেই সঙ্গে বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রবিবার আমরা দেখলাম, প্রেস ক্লাবের সামনে একা একজন পুলিশকে পেয়ে কীভাবে পেটানো শুরু হয়েছিল। তা সবাই দেখেছেন। সেখানে পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সচরাচর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঢোকে না। তবে কয়েকজন বহিরাগত প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেয় এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এটি পুলিশের একটি কৌশল।’
করোনাকালের চিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম, তখন আমাদের কাছে করোনার কোনো প্রতিষেধক ছিল না। করোনায় মৃত্যুবরণকারী মায়ের মরদেহ হাসপাতাল থেকে সন্তান যখন নিতে আসছিল না, তখন পুলিশ সদস্যরাই সেই মায়ের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন, জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করেছেন। করোনায় দুস্থ-অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।’
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রত্যেক পরিবারকে এককালীন ৮ লাখ টাকা প্রদানে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া চাকরিরত অবস্থায় স্থায়ী অক্ষম ও অবসরে গেলে ৪ লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপি, শিবির, হেফাজত ও দুর্বৃত্তদের হামলায় বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৮ জন সদস্যের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২০ সাল থেকে আজীবন রেশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
২০২০ সালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সম্মানার্থে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। কর্মস্থলে নিহতদের স্মরণে প্রতি বছর ১ মার্চ ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’র আয়োজন করা হয়।