রবিবার, ২৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

২০ হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবন

করোনায় যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ

রাহাত খান, বরিশাল

২০ হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবন

দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় বন্ধ রয়েছে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটসহ সারা দেশের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন লঞ্চ মালিকরা। যারা কর্মরত আছেন তারাও বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় লঞ্চ চলাচল শুরুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নৌযান চালুর দাবি জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। এদিকে নৌযান মালিক-শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি সরকারকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। উল্লেখ্য, বরিশাল-ঢাকা রুটসহ সারা দেশে ৭০০ যাত্রীবাহী নৌযান রয়েছে। এতে কাজ করছে অন্তত ২০ হাজার নৌযান শ্রমিক।  করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত সারা দেশ। সংক্রমণ এড়াতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে সরকার। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন নৌবন্দরে নোঙর করে রাখা হয়েছে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো। ঘাটে নোঙর করা লঞ্চ পাহারা দেওয়ার জন্য দু-চারজন কর্মচারী থাকলেও বাকি কর্মচারীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনো ধরনের বেতন-ভাতা ছাড়াই। ঘাটে নোঙর করে রাখা লঞ্চ পাহারার কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদেরও দেওয়া হচ্ছে না বেতন-ভাতা। খোরাকি (দৈনিক খাবার খরচ) দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অসহায় নৌযান শ্রমিকরা। শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দাবি করেছেন তারা। সারা দেশে সড়ক পথে গণপরিবহন চলাচল করলেও যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। 

একই দাবিতে গতকাল দুপুর ১২টায় ঢাকার পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা (যাপ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন লঞ্চ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। নেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালুর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। 

বরিশাল বিভাগীয় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার বলেন, স্বাভাবিক সময়ে শ্রমিকদের কাঁধে ভর দিয়ে বিগত দিনে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন লঞ্চ মালিকরা। অথচ করোনাকালে কোনো শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায়নি তারা। নৌযান শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা বাঁচিয়ে রাখতে যাত্রীবাহী লঞ্চ চালুর দাবি জানান তিনিসহ অন্য শ্রমিকরা।

লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, শুধু নৌযান শ্রমিকরাই নন, ছোট ছোট লঞ্চ মালিকরাও চরম বিপদে আছেন। করোনাকালে ছোট লঞ্চ মালিকদের আয় বন্ধ রয়েছে। সারা দেশে আন্তজেলা বাস, ট্রাক, থ্রি হুইলার, ব্যক্তিগত যান এবং ফেরি সার্ভিস চলাচল করছে। এ অবস্থায় যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। সরকার অনুমতি দিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মালিক-শ্রমিকরা লঞ্চ চলাচল করতে আগ্রহী বলে তিনি জানান।

এদিকে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর