বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বকেয়া ঋণে বিপাকে তারাপুর চা বাগান

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

আগের তত্ত্বাবধায়কের রেখে যাওয়া বকেয়া ঋণের চাপে দিশাহারা সিলেটের তারাপুর চা বাগানের বর্তমান কর্তৃপক্ষ। দেবোত্তর সম্পত্তির ওপর গড়ে তোলা চা বাগানটির কাছে এখনো ৪১ লাখ টাকা পাবে কৃষি ব্যাংক। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী বাগানের বিক্রীত চা পাতার টাকা ব্রোকার হাউস থেকে নিয়ে যাচ্ছে ব্যাংক। এ ছাড়া এ বছর নতুন করে ঋণ দেয়নি কৃষি ব্যাংক। সবমিলিয়ে মারাত্মক সংকটে পড়েছে বাগান পরিচালনা কমিটি। এ অবস্থায় তিন সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়েছে শ্রমিকদের। বকেয়া মজুরি ও রেশনের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে গতকাল দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে বকেয়া মজুরি পরিশোধের আশ্বাস পেয়ে এক সপ্তাহ কর্মবিরতির পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগদানে সম্মত হয়েছেন। তারাপুর চা বাগান পরিচালনা কমিটির সম্পাদক সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সান্তনু দত্ত সন্তু জানান, ‘ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় তিন সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় তারা গত ২০ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। কাজে যোগ না দেওয়ায় বাগানে চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে গতকাল বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে আগামীকাল (আজ) বৃহস্পতিবার তিন সপ্তাহের মধ্যে দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আর আগামী সপ্তাহের মজুরির সঙ্গে বকেয়া আরও এক সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে।

এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা আগামীকাল (আজ) বৃহস্পতিবার থেকে কাজে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন।’

বাগানের বাংলোতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাগান পরিচালনা কমিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- সভাপতি ড. নারায়ণ সাহা, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলেন্দু দে, সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর সান্তনু দত্ত সন্তু, সদস্য অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য ও ডা. বনদ্বীপলাল দাশ। এ ছাড়া শ্রমিকদের পক্ষে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা, তারাপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা চৈতন্য মোদি ও সুনীল মোদিসহ ১১ জন শ্রমিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বাগান পরিচালনা কমিটির সম্পাদক সান্তনু দত্ত সন্তু জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মতো বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাগান পরিচালনা করতেন দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ গুপ্ত। গত বছর তিনি কৃষি ব্যাংক থেকে ১ কোটি টাকা ঋণ নেন। এর মধ্যে এখনো ৪১ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী বাগানের চা পাতা বিক্রির পর ব্রোকার হাউস থেকে টাকা কৃষি ব্যাংক সংগ্রহ করত। এই চুক্তির কারণে বর্তমান কমিটির সময় বিক্রীত চায়ের ১৫ লাখ টাকা ব্রোকার হাউস বাগান কর্তৃপক্ষকে দিচ্ছে না।

সন্তু জানান, দেবোত্তর সম্পত্তির ওপর বাগান ও ভূমিকর পরিশোধ না হওয়ায় কৃষি ব্যাংক এখন ঋণ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করছে। অথচ তারাপুর বাগান সৃজনের পর থেকে কৃষি ব্যাংক ঋণ দিয়ে আসছে। নতুন করে ঋণ না দিলেও আগের তত্তাবধায়ক পঙ্কজ গুপ্তকে দেওয়া ঋণের বকেয়া টাকা বর্তমান কমিটির কাছ থেকে আদায় করতে চাইছে।

প্রসঙ্গত, সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় প্রায় ৪২৩ একর দেবোত্তর সম্পত্তির ওপর তারাপুর চা বাগান। ১৯৯০ সালে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে এই সম্পত্তি হাতিয়ে নেন সিলেটের আলোচিত ব্যবসায়ী রাগীব আলী। ২০১৬ সালে এ সংক্রান্ত মামলায় বাগানের দখলদারিত্ব হারান রাগীব আলী। বাগানের দায়িত্ব পান দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ গুপ্ত। তবে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের এক রিভিউয়ের রায়ে কর্তৃত্ব হারান পঙ্কজ। বাগান ও দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য উচ্চ আদালত থেকে প্রশাসন ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেয় ওই কমিটি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর