বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

১২ লাখ টন ধারণক্ষমতার এলপিজি টার্মিনাল হবে মাতারবাড়ীতে

পরিবহন খরচ কমবে টনপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার টাকা, বিনিয়োগ হবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

দেশি-বিদেশি অর্থায়নে বছরে ১২ লাখ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) টার্মিনাল নির্মাণ করছে সরকার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে জাপানের মারুবেনি, সিঙ্গাপুরের ভিটল (এশিয়া) ও বাংলাদেশের পাওয়ার কোরের যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে এই এলপিজি টার্মিনালটি নির্মাণ হচ্ছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। টার্মিনালটি নির্মাণ হলে এলপিজির পরিবহন খরচ বাবদ টনপ্রতি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা কমবে। তখন এই পরিমাণ টাকার কম দামে এলপিজি গ্যাস গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা যাবে। বিল্ট অন ট্রান্সফার পদ্ধতিতে এটি নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে বিপিসি। এদিকে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে আসছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং চাহিদা অনুপাতে সরবরাহের লক্ষ্যে সরকার বড় আকারের এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে প্রতি টন এলপিজি গ্যাস পরিবহনে খরচ পড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার ৩৩৫ টাকা। সরকারের নিয়ন্ত্রণে মাতারবাড়ীর এই টার্মিনাল নির্মাণ হলে পরিবহন খরচ কমে আসবে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার টাকা। তখন গ্যাসের দামও কমে আসবে এবং সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর উপকূলে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। হিমায়িত আকারে এলপি গ্যাস নিয়ে সাগরে ভাসমান থাকবে জাহাজ। টার্মিনালে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেই গ্যাস পুনরায় তরল পেট্রোলিয়ামে পরিণত করা হবে এবং টার্মিনাল থেকে এলপি গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশকরা আন্তর্জাতিক দামে তা কিনে নেবেন। পরিবেশকরা টার্মিনাল থেকে দেড় হাজার থেকে চার হাজার টনের জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এলপিজি নিয়ে বোতলজাত করে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করতে পারবেন। প্রসঙ্গত, ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন দেন।

টার্মিনালের মালিকানায় থাকবে মারুবেনির ৪০ শতাংশ, ভিটল ও পাওয়ারে কোরের ৩০ শতাংশ এবং বিপিসির ৩০ শতাংশ। এর জন্য বিপিসিকে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, হিমায়িত করা এলপি গ্যাস নিয়ে জাহাজ সাগরে ভাসমান থাকবে। এসব জাহাজের ধারণক্ষমতা হবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টন। টার্মিনালে মজুদক্ষমতা থাকবে ৫০ হাজার টন। এতে এলপি পরিবহনে সাশ্রয় হবে।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে দুই থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন এলপিজি আমদানি করা হয়। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে ছোট আকারে জাহাজের পরিবহন খরচ টনপ্রতি ১০০ থেকে ১১০ ডলার। টার্মিনাল নির্মাণ হলে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার জাহাজে পরিবহন খরচ হবে ৬৫ থেকে ৭০ মার্কিন ডলার। এতে টনপ্রতি ব্যয় কমবে ৪০ ডলার।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) তথ্যমতে, দেশে দিন দিন এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। ২০০৮ সালে দেশে গৃহস্থালি ও রান্নার কাজে এলপি গ্যাসের ব্যবহার ছিল মাথাপিছু শূন্য দশমিক ৩ কেজি। কিন্তু ২০২০ সালে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৬৩ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১১ শতাংশ এলপিজি ব্যবহার করে। অন্যদিকে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৩ শতাংশ রান্নায় প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে। দেশে রান্নার কাজের পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্য ও অটোমোবাইল খাতেও এলপি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে দেশে এলপিজির চাহিদা ১০ লাখ টন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরে এ চাহিদা দ্বিগুণ হবে।

বিপিসি সূত্র বলছে, মাতারবাড়ীতে টার্মিনাল স্থাপিত হলে অপেক্ষাকৃত কম দামে এলপি গ্যাসের কাঁচামাল (প্রোটিন ও বিউটেন) আমদানি করা যাবে। কারণ মাতারবাড়ীতে এক লাখ টন বা এর বেশি ধারণক্ষমতার জাহাজ চলাচলের জন্য পানির গভীরতা রয়েছে। এতে বড় জাহাজে একসঙ্গে বেশি পরিমাণে গ্যাস আমদানি করা যাবে। খরচও কম হবে।

মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ হলে গ্যাসের পরিবহন খরচ কমে যাবে। এতে গ্রাহকরাও সাশ্রয়ী দামে এলপিজি ব্যবহার করতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিবহন) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, মাতারবাড়ীতে এলপিজি নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে দেশের সাধারণ ভোক্তাশ্রেণি উপকৃত হবেন এবং আরও সাশ্রয়ী মূল্যে এলপি গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। দ্রুত এ বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর