বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

পানি সংকট মোচনে ফলপ্রসূ পদ্ধতি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং

জিন্নাতুন নূর

মাটির নিচের পানি ব্যবহার কমিয়ে আনতে সারা পৃথিবীতেই ‘বৃষ্টির পানি ধরে রাখো’ নীতি- রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং পদ্ধতি নিয়ে কাজ চলছে। এতে ভবিষ্যতে ব্যবহার্য ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষরণ সম্ভব। বাংলাদেশেও পদ্ধতিটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ‘রেইন ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন ২০২০ সাল থেকে পদ্ধতিটি নিয়ে কাজ শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিকল্প ব্যবহারের জন্য বৃষ্টির পানি পাওয়া যায়। পানির অপচয় রোধে এবং সংকট কাটাতে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা অনায়াসে বছরের চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা সম্ভব। এই হিসাবে ভূগর্ভের ৫০ শতাংশ পানির ব্যবহার রোধ করা সম্ভব।  রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের উপকারিতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানান, এর ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের খরচ কমবে এবং বিদ্যুৎ বিলও কমে যাবে। এতে পানির পাম্পের ঝামেলা নেই। রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং পদ্ধতিতে পানি সংরক্ষণের মূল ব্যয়ই হয় রিজারভারের জন্য। কেউ যদি নতুন একটি কারখানা তৈরি করেন সেখানে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের জন্য বাড়তি খরচ হবে মোট খরচের এক শতাংশ। ১ হাজার বর্গফুটের একটি ছাদে যদি ১০ মিলি লিটার বৃষ্টি হয় তাহলে ১ হাজার লিটার পানি পাওয়া যাবে। ঘর-বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার ছাড়াও এই পানি সুপেয় হিসেবে খাওয়া যাবে। খুলনা জেলায় আগে থেকেই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা পরবর্তী চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত পানীয় পানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখা গেছে, ঢাকা শহরের নতুন ভবনগুলোতে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং করলে বাড়তি টাকা খরচ হবে না।  গাজীপুরের এমভিএম কাটিং এজ নামের আরেকটি পোশাক কারখানাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে। রেইন ফোরামের সম্পাদক স্থপতি মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, জেনেশুনে এবং বুঝে এখন পানির ব্যবহার না করলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মারাত্মক শঙ্কার মধ্যে ফেলব।

তিনি বলেন, দেশে যত গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি আছে তার প্রতিটির ছাদ গড়ে ৬৫ হাজার বর্গ ফুট। এই ছাদগুলোয় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং করলে তাদের পানির চাহিদা মিটবে পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমানো সম্ভব।  

দেশে মানুষের বিভিন্ন কাজে মাটির নিচের পানির ওপর নির্ভরশীলতা বেশি বলে প্রচুর পানি মাটি থেকে তোলা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের ভূগর্ভস্থ ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবুও নির্বিচারে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার চলছেই। অথচ পৃথিবীর যেসব দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভালো তারাও এখন সেই পানি ব্যবহার করছে না। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ শিল্প-কারখানা তৈরি হচ্ছে যার অন্যতম কারণ এই কারখানাগুলো সহজেই পানির জোগান পাচ্ছে। কিন্তু ইউরোপে পরিবেশ দূষণ হওয়ার বিধিনিষেধের কারণে তা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রে সেনাবাহিনী জলাধার পাহারা দেয়। যুক্তরাজ্যে জলাধার বা লেকগুলো বেষ্টনী দিয়ে রাখা হয়। তারা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে না।

ভারতের চেন্নাই নগরীতে ২০১৫ সালের দিকে বৃষ্টি হলে বন্যা, জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ দেখা দিত। সেই চেন্নাইতেই ২০১৯ সালে বৃষ্টি না হওয়ায় দুঃসহ পানি সংকট দেখা দেয়। যদি দুই বছর বাংলাদেশে বৃষ্টি না হয় তাহলে এদেশেও তীব্র খরার শঙ্কা রয়েছে। আগামী দিনে বাংলাদেশ পানি নিয়ে বড় ধরনের বিপদেরও সম্মুখীন হতে পারে। দেশের উত্তরবঙ্গে আর্সেনিক ও খরার সমস্যা আছে। আবার দক্ষিণবঙ্গের পানি লবণাক্ত, সিলেট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পানিও লবণাক্ত। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩২ থেকে ৩৫টিতেই পানির সংকট রয়েছে।

সর্বশেষ খবর