শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
আর্টিকেল নাইনটিনের তথ্য

মফস্বলে মতপ্রকাশের অধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি

প্রতিদিন ডেস্ক

ঢাকার বাইরে মফস্বল ও গ্রাম এলাকায় মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি। জাতীয় পর্যায়ে এই হার ২২ দশমিক ২২ শতাংশ হলেও মফস্বলে তা মোট ঘটনার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২০ সালে বাংলাদেশে হামলা-মামলা, হয়রানিসহ মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ৬৩১টি ঘটনা রেকর্ড করে এই তথ্য জানিয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘আর্টিকেল নাইনটিন’। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী অধিকার লঙ্ঘনের ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ৪৫৪টি ঘটনাই আইনি হয়রানির। এ সময়ে মতপ্রকাশের কারণে ১০৩টি শারীরিক হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস-২০২১ উপলক্ষে গতকাল আর্টিকেল নাইনটিন ‘সাগর-রুনি হত্যা মামলা : তদন্ত ও বিচার’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতি এবং সাংবাদিক নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসে দেশে একজন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।

অপহৃত হয়েছেন আরও দুই সাংবাদিক। এ সময়ে শারীরিক আঘাত ও লাঞ্ছনার ১৩৭টি ঘটনায় ভুক্তভোগী ২৪১ সাংবাদিক। এ ছাড়া ৫৫টি মামলায় ১৫৩ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ১৬ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয়।

মামলাগুলোর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ মামলায় আসামি ৪৮ সাংবাদিক। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বিভিন্ন হয়রানিমূলক ২৪ মামলার আসামি আরও ৮৯ জন। এ ছাড়া ১৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির ছয়টি মামলা হয়েছে।

আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং একাত্তর টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাদিয়া শারমীন।

অনুষ্ঠানে সোহরাব হাসান বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের। কথা বলার বা লেখার নিরাপত্তা থাকলে নিগৃহীত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। সংবিধানে ‘সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার’ এই নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি এই নিরাপত্তা পাননি। এখন তাঁদের হত্যাকান্ডের বিচারের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র ব্যর্থ হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং তাঁর স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে ঢাকার রাজাবাজার এলাকায় নিজের বাসায় হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা র‌্যাব গত মাস পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে ৮২ বার সময় নিয়েছে। সর্বশেষ হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ র‌্যাবকে এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২৪ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিতে বলেছে।

২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আক্রমণের শিকার হন সাংবাদিক নাদিয়া শারমীন। তিনি বর্তমানে একাত্তর টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর হওয়া হামলার ঘটনারও কোনো বিচার হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। তবে ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বরের পর আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি।’ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বিচারের জন্য দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়ে নাদিয়া শারমীন বলেন, ‘কেবল পেশাগত কারণে হত্যা, হামলা এবং মামলার শিকার হন সাংবাদিকরাই। তাই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে অন্যান্য অপরাধের পার্থক্য রয়েছে।’

ওয়েবিনারে সভাপতির বক্তব্যে ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘সাগর-রুনি যখন হত্যার শিকার হন, পাশের কক্ষে অবস্থান করা তাঁদের একমাত্র ছেলে মেঘের বয়স তখন পাঁচ বছর। মেঘের বয়স এখন ১৪। কিন্তু তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত মামলায় বলার মতো কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেননি। খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পতির পরিবার ও সহকর্মীদের মধ্যে বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।’ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি আহ্‌বান জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর