বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দিনে সশস্ত্র মহড়া রাতে ছিনতাই

‘ভাইব্বা ল কিং’ কিশোর গ্যাং গ্রুপের নয় সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পেশাগতভাবে কেউ লেগুনা, অটো চালক, কেউ দোকানের কর্মচারী বা নির্মাণকর্মী। স্কুলের গন্ডি পার হতে না পারা এ কিশোররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের একাধিক ভাষায় পারদর্শী হিসেবে পরিচয় দিত। পাশাপাশি টিকটক ভিডিও বানাত। যেখানে সশস্ত্র চিত্র ধারণ করা হতো। রাতে তারা ছিনতাইয়ে নেমে পড়ত। ১৫-২০ জনের এ চক্রটির সবাই ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। দু-তিন বছর ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, বসিলা, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র মহড়া, ভাড়ায় শোডাউন করে আসছিল চক্রটি।

সোমবার রাতে চক্রটির নয় সদস্যকে গ্রেফতার করেন র‌্যাব-২-এর সদস্যরা। তারা হলো ভাইব্বা ল কিং গ্যাংয়ের প্রধান শরীফ ওরফে মোহন, সদস্য উদয়, শাকিল, নয়ন, জাহিদ, নাঈম, রুমান, তামিম খান ও সজীব। তাদের কাছ থেকে ৪টি লোহার দেশি তৈরি ছুরি, ১টি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, গাঁজা ৫০ পুরিয়া, ২টি স্টিলের তৈরি ছুরি, ১টি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, ১টি প্লাস্টিকের পিস্তলসদৃশ বস্তু, ৬৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জাম ও ৩টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণামাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, রাজধানীর বেশকিছু এলাকাকে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, বসিলা ও রায়েরবাজার অন্যতম। এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসকান্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র‌্যাব।

সোমবার রাতে র‌্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ার তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা চান এক দম্পতি। র‌্যাব-২-এর গোয়েন্দা ও টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর রায়েরবাজার থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই করা ভ্যানিটি ব্যাগ। রাতেই র‌্যাবের টহল দল সাত মসজিদ হাউজিং এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং চক্রটির প্রধান মোহনসহ পাঁচজনকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তারা ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সদস্য। চক্রের সদস্য ১৫-২০ জন। দলের লিডার মোহনের নেতৃত্বে দু-তিন বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এরা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এ গ্রুপের সদস্যরা আগে লেভেল হাই গ্যাংয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্তঃকোন্দলে যা ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে সক্রিয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের গ্যাং-সংক্রান্ত বিভিন্ন ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রচারণা পাওয়া যায় যেমন- ‘মোহাম্মদপুরের পোলাপান যা করি তা টোকেন ছাড়াই ওপেন’, ‘মোহাম্মদপুরের পোলা বাজান, আমি একাই এক শ, গ্যানজাম করার আগে ভাইব্বা লইও’।

 

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, দু-তিন বছর ধরে কিশোর গ্যাং চক্রটি মোহাম্মদপুরে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তারা ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারধরে অংশ নেয়। এ ছাড়া ইভ টিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িত। তারা জানায়, ‘ভাইব্বা ল কিং’ মানে তাদের সদস্যরা যে অবস্থায় থাকুক না কেন তারা মোহাম্মদপুরের কিং। অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। তারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে গ্রাহকদের টার্গেট করত। ‘ভাইব্বা ল কিং’ চক্রটিকে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করা হয়েছে। চক্রে জড়িত পলাতকসহ পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর