রবিবার, ২২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

মেয়াদ শেষ, কাজ ১৯ শতাংশ

মুজিব কিল্লা প্রকল্প

উবায়দুল্লাহ বাদল

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমাল রক্ষায় দেশের উপকূলীয় এলাকায় মাটির কিল্লা নির্মাণ করেছিল বঙ্গবন্ধু সরকার। যা ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এ কিল্লা সংস্কার এবং নতুন করে আরও ৩৭৮টি কিল্লা নির্মাণে ২০১৮ সালে চার বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প নেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের মেয়াদ গত বছর ডিসেম্বরে শেষ হয়। এ সময় প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল মাত্র ১৯ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় পরে মেয়াদ আরও এক বছর (ডিসেম্বর, ২০২২) বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিল্লা নির্মাণের প্রধান বাধা কাক্সিক্ষত জমি না মেলা।  প্রকল্পের মেয়াদ আরও কয়েক বছর বাড়াতে শিগগিরই সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. জানে আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমান সময় পর্যন্ত মুজিব কিল্লা প্রকল্পের অগ্রগতি ১৯ শতাংশ। করোনার কারণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রকল্প এলাকায় আসতে পারেনি। ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও পরিবর্তন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাবলে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ করতে হলে আরও মেয়াদ বাড়াতে হবে, বাড়বে প্রকল্প ব্যয়ও। এজন্য শিগগিরই সারসংক্ষেপ তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হতে পারে।’

প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন করুণ পরিণতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ছিল     মুজিববর্ষের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম একটি। অনেক জায়গায় জমি না পাওয়াসহ নানা কারণেই প্রকল্পটি কাক্সিক্ষত গতি পায়নি। ইতোমধ্যে সেখানে কিছু কর্মকর্তা এদিক-সেদিক করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। শিগগিরই মুজিব কিল্লা প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি সবার চোখে পড়বে।’

জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ১৭২টি মুজিব কিল্লা সংস্কার ও উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন করে নির্মাণ করা হবে আরও ৩৭৮টি কিল্লা। এতে মোট কিল্লার সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৫০। দেশের ঘূর্ণিঝড়প্রবণ ১৬ জেলার ৬৪ উপজেলা এবং বন্যা ও নদী ভাঙনপ্রবণ ২৪ জেলার ৮৮ উপজেলায় এগুলো নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় এর ব্যয় বাড়ছে ৪০ কোটি টাকা। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা ছিল ১ হাজার ৯৯৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে চার বছরে প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ১৬ শতাংশ। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন কিল্লা হচ্ছে গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, নড়াইল, সুনামগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলায়। দুর্যোগকালে কিল্লার আশপাশের জনসাধারণ ও তাদের মূল্যবান সামগ্রী রক্ষা, গৃহপালিত প্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণ, স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি খেলার মাঠ ও হাটবাজার হিসেবে কিল্লা ব্যবহার করা হবে। গ্রাম ও ইউনিয়ন কমিউনিটির মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহার করা হবে কিল্লা। এমনকি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও দুর্যোগের সময় অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র হিসেবেও এ কিল্লা ব্যবহার করা যাবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর