শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
আন্তমন্ত্রণালয় সভার অপেক্ষা

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে ধীরগতি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে ধীরগতি

তিন বছর ধরে অগ্রগতি নেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে। এই ধীরগতির কারণে বাড়ছে তামাকসংক্রান্ত স্বাস্থ্য ক্ষতি। আন্তমন্ত্রণালয় সভার অপেক্ষায় আইন সংশোধন প্রক্রিয়া। সরকারের অঙ্গীকারের পরও তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক উদ্যোগ আটকে থাকছে দীর্ঘ সময়।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেরি হলে তামাকের ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। সংশোধন হওয়ার জন্য আইনের খসড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আছে। এখন আইন চূড়ান্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো আন্তমন্ত্রণালয় সভা করবে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ভাষা পরীক্ষার জন্য পাঠাবে। এরপর আইনবিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির কাছে পাঠাবে। এরপর মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তের জন্য পাঠাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা থাকলে খুব দ্রুত এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। নির্বাচন বিধিমালা দ্রুত সংশোধন হতে দেখলাম। সে রকম তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনও দ্রুত সংশোধন করা প্রয়োজন।’ জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ২০০৫ সালের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন (২০১৩ সালে সংশোধন) সংশোধনের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এর খসড়া সংশোধনী তৈরি ও তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং অংশীজনের মতামত নেওয়ার কাজও শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই খসড়া চূড়ান্তের কাজটি এগোচ্ছে অনেকটা শ্লথ গতিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালেই ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্য অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের নির্দেশনাও দেন তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনারও বাস্তবায়ন নেই। তামাকের পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। তবুও ক্ষতিকর এই পণ্য নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আইনের খসড়া সংশোধনীতে যেসব প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্য উৎপাদন, আমদানি, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। ১৫৫ জন সংসদ সদস্য, বিএমএ ও সন্ধানীসহ ২০টির বেশি চিকিৎসক সংগঠন, শতাধিক স্বনামধন্য চিকিৎসক, শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং সাংবাদিকদের সংগঠন, ধর্মীয় নেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠনসহ ২০ হাজারের বেশি সংগঠন ও ব্যক্তি ইতোমধ্যে সংশোধিত এই খসড়ার প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ফাঁকগুলো রয়েছে সেগুলো বন্ধ হবে। এ ছাড়া তামাকের ব্যবহার কমবে ও নতুন করে কেউ তামাক গ্রহণে নিরুৎসাহিত হবে। ফলে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে অধূমপায়ীরা রক্ষা পাবে। এ ছাড়া গণপরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কিংবা খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করার পক্ষে শুধু তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা নয়, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলও এক মত। তবুও সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস বিলম্বিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ইতোমধ্যে এই ধারাগুলো সংযুক্ত হয়েছে এবং তারা এর সুফলও পাচ্ছে। তামাকের সর্বনাশা ছোবল থেকে রক্ষা পেতে সব নাগরিকের দায়িত্ব তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীর প্রস্তাবনাকে সমর্থন এবং তামাক কোম্পানির কূটকৌশলকে প্রতিহত করা।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর