বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়েই জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধ করব : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়েই জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধ করব : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি বলেছিলাম এ দেশ স্বাধীন করে ছাড়ব, আজ দেশ স্বাধীন। তিনি বলেছিলেন রক্ত দিয়ে হলেও এ রক্তের ঋণ আমি শোধ করে যাব। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে, একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এ দেশের স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন দেশ হিসেবে বেঁচে থাকবে। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। তিনি তাঁর রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেছেন, এখন আমাদের পালা। আমাদের কর্তব্য তাঁর রক্তের ঋণ শোধ করা। যেদিন গৃহহীনরা গৃহ পাবে, দেশের মানুষকে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব। সেটা হবে রক্তের ঋণ শোধ করা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়েই জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধ করব। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ১৪৭ অনুযায়ী এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সংসদের সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আমু, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সরকারি দলের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোস্তাফিজুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, রওশন আরা মান্নান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শপথ করছি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ- স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। সেটাই হবে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না।

একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গেছেন। জিডিপি ৯ শতাংশ নিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ এখনো তা স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে ৮ শতাংশ পর্যন্ত নিতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু, ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র তিন বছর পর ১৯৭৩ সালে তিনি নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্য, মানুষের উন্নয়ন। তিনি চেয়েছিলেন দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। এ দেশের মানুষ যাতে দুবেলা দুমুঠো ডালভাত খেয়ে বেঁচে থাকে। অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন এরশাদ, জিয়া, মোশতাক। কই তারা তো মানুষের উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন করে যেতে পারেনি। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন করে চলেছে।

শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ভুট্টো তার নিজের স্বার্থে এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রধানদের বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলেন। তার পরই ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। তিনি প্রথমেই লন্ডনে যান। আমার মা শুধু বলতে পেরেছিলেন... ‘তুমি কি বেঁচে আছো’ আর কোনো কথা মা বলতে পারেননি। ১০ জানুয়ারি তিনি ভারত ঘুরে দেশে ফিরে এসে প্রথমে পরিবারের কাছে না গিয়ে জনগণের কাছে যান। দীর্ঘ নয় মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য কারাগারে কবর খোঁড়াও হয়। তবে আমাদের এ যুদ্ধ কিন্তু জনযুদ্ধ ছিল। সেই সঙ্গে মিত্রবাহিনীও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, হাজার হাজার ভারতীয় সেনাও মারা যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দেশের মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন। এই বঞ্চিত মানুষগুলোর মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তান সরকার ভাষার ওপর আঘাত হানল, তিনি ভাষার অধিকার ফিরিয়ে আনতে ভাষা অন্দোলন শুরু করেন এবং সেই পথ ধরেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তানি চক্রান্তকারীরা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অভূতপূর্ব সাড়া দেয় সবাই। এ অত্যাচারের পরে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধু তা আগে থেকেই জানতেন, সেজন্য তিনি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। এমনকি তিনি এ কথাও বলেছিলেন, আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি তোমরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মেকাবিলা করবে। তিনি সে সময় স্বাধীনতার ঘোষণাও দেন। তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুচিন্তিতভাবে। তাঁরই নির্দেশনামতো আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে আশ্রয় নিয়ে সরকার গঠন করেন।

আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে বলেছিলেন, আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে যদি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে না পারি। তিনি শূন্য হাতে শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু না জন্মালে আমরা এ দেশ পেতাম না, স্বাধীন পতাকা পেতাম না। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন এ দেশ (পূর্ব পাকিস্তান) বাঙালিদের না। সেজন্য তিনি বারবার বাঙালি জাতিকে সব দিক থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এলে দেশের জনগণ পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করে।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষদের বড় ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস না হারাতে।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার জেলখানায় বন্দি করে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু ভারতসহ বিশ্বজনমতের চাপে তারা সেটা করতে পারেনি।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করার বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল। যারা ভেবেছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের উপনিবেশ হবে; সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট মীমাংসিত বিষয়কে অমীমাংসিত করার চক্রান্ত করে চলেছে। এরাই ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মারার রাস্তা তৈরি করেন তাঁরই কাছের মানুষেরা।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে ব্র্যাকেটবন্দি করে রাখার চেষ্টা করা হয়।

সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ১৪৭-এর প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক বিশেষ মহিমান্বিত দিবস। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব। বাঙালি জাতির জীবনে ১০ জানুয়ারি একটি বিশেষ তাৎপর্যবহ দিন। এদিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে, তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করা হোক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর