শিরোনাম
বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অবৈধ সিএনজি স্টেশনের দৌরাত্ম্য

চট্টগ্রামে নিয়মিত ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা ♦ নীরব প্রশাসন

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

অবৈধ সিএনজি স্টেশনের দৌরাত্ম্য

নগরের চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় অবৈধ সিএনজি স্টেশন স্থানীয়দের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের হয়রানিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে এই স্টেশনে। কেবল তা-ই নয়, স্টেশন দখল নিয়ে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটলেও নীরব ভূমিকা পালন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এই স্টেশনের মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। আর এই টাকার ভাগ যাচ্ছে ট্রাফিক, থানা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে। এ কারণে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি। তবে মাঝেমধ্যে প্রশাসন কঠোর হলেও দিন না যেতেই ফিরে আসে স্বরূপে। সিডিএ স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দুই সারিতে সিএনজি অটোরিকশা রাখার কারণে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে কথা বললেই চালক ও স্টেশনের চাঁদাবাজরা একজোট হয়ে যান। তারা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। নগরের ব্যস্ততম কাপ্তাই মোড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, সিডিএ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রবেশ গেটে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সিএনজি অটোরিকশা। গাড়ি ও চালকের সঙ্গে ঘেঁষেই চলাফেরা করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। কেউ কেউ জায়গা সংকুলানের অজুহাতে ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দিচ্ছে ছাত্রীদের। অন্যদিকে সড়কের ওপর এলোপাতাড়িভাবে রাখা হয়েছে গাড়ি। দুই পাশের খালি জায়গায়ও গাড়ি। কোনো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীর জন্য, কোনোটির চলছে মেরামতের কাজ। গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা মানার গরজ নেই চালকদের। যাত্রীবাহী মিনিবাসগুলোর একটি আরেকটিকে কোনোভাবেই সামনে যাওয়ার সুযোগ দেয় না। আবার সামনে যাওয়ার জন্য অনবরত হর্ন দিয়ে চলেন পেছনের গাড়িচালক। এর মধ্যে বিপজ্জনকভাবে চলছে যাত্রী ওঠানো-নামানো। এ ছাড়া কোনো অভিভাবক কিছু বললেই তাদের উদ্দেশ করে বাজে মন্তব্য করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হলেও দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ থাকছে নীরব ভূমিকায়। চালকদের অভিযোগ, প্রতি মাসে পুলিশের টোকেন নিতে হয় ৬০০ টাকা দিয়ে আর দৈনিক লাইনে দিতে হয় ২০ টাকা। আর প্রতি মাসে লাইন থেকে ট্রাফিক পুলিশের টিআইকে দেড় লাখ টাকা, থানা পুলিশকে ২ লাখ টাকা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা জসিম উদ্দীনকে ৩০ হাজার করে টাকা দিতে হয়।

সমিতির কথিত সাধারণ সম্পাদক আজাদ এসব টাকার লেনদেন করেন বলেও জানান চালকরা। আর যদি টোকেন নেওয়া বন্ধ করে দেন কোনো চালক, তাহলে তাকে স্টেশনেও দাঁড়াতে দেয় না, মামলাও দেওয়া হয়। অবৈধ এই স্টেশন নিয়ন্ত্রণের নামে টোকেন দিয়ে তিন হাজার সিএনজি থেকে মাসে আদায় করা হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। টোকেন-বাণিজ্য, পুলিশের জন্য, নেতার জন্য, লাইনের খরচের নামে এসব টাকা আদায় করা হয়। আর এই লাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলে নিয়মিত অস্ত্রের মহড়া। সম্প্রতি টোকেন না নেওয়ায় এক চালককে অপহরণের পর ছুরিকাঘাত করে আহত করা হয়েছে। আহত চালক আজমির হোসেন (৩২) চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা হয়েছে। এর পরও বেপরোয়া আচরণ করছেন কথিত এসব শ্রমিক নেতা।

আজমির হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে জেলার কাপ্তাই রুটে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে আসছেন। প্রতি মাসে গাড়ি চালানোর জন্য ৬০০ টাকার টোকেন নিতে হয়। টাকার সংকটে ফেব্রুয়ারি মাসের টোকেন সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। আর এই টোকেন সংগ্রহ করতে না পারায় তাকে ধরে নিয়ে যান আজাদসহ কয়েকজন। টোকেন সংগ্রহ করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করলেও তা না শুনে একটি গ্যারেজে নিয়ে তাকে বেধড়ক পেটানোর পর ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। রাস্তার মাথা এলাকায় অবৈধ গ্রাম ট্যাক্সির স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে তারা। প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি মিলে তা খাচ্ছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কোনো ধরনের টাকা বা টোকেন-বাণিজ্যের সঙ্গে আমার ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট জড়িত নয়। ট্রাফিক আইন পরিপন্থী কার্যক্রমের জন্য নিয়মিত সংশ্লিষ্ট পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারা টোকেন-বাণিজ্য করছে সেটা দেখার দায়িত্ব থানা পুলিশের।’ এ বিষয়ে জানতে লাইনের নিয়ন্ত্রক সিএনজি অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজাদকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর