একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কেটে গেছে প্রায় সোয়া চার বছর। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিয়েছিল শরিক দলগুলো। ভোটের পর আর শরিকদের খোঁজ রাখেনি জোটের নেতৃত্বদানকারী দলগুলো। মহাজোটের শরিকরা বলছেন, নির্বাচনের পর নানা ইস্যুতে তারা বসতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। কিন্তু পাত্তা পাননি তারা। আর জামায়াতও কোনো ইস্যুতে জোটবন্ধু বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে নামতে পারেনি মাঠে। ‘একলা চলো নীতি’র কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ জোটের শরিকরা। তারা বলছেন, জোটের শরিকদের এভাবে অবমূল্যায়ন করলে আগামী নির্বাচনে এর খেসারত দিতে হবে জোটপ্রধান দলকে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একটি আসন ছেড়ে দিয়েছিল মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে। আর বিএনপির ছেড়ে দেওয়া দুটি আসনের মধ্যে একটিতে গণফোরাম ও একটিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। মহাজোটের অন্যতম অংশীদার ১৮ দল সিলেটে কোনো আসনে মনোনয়ন না পেলেও জেলাজুড়ে তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে। একইভাবে কোনো আসন ভাগে না পেয়েও জোটের প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে ছিল জামায়াত। কিন্তু নির্বাচনের পর দুই জোটের নেতৃত্বদানকারী দলগুলো ভুলে যায় শরিকদের কথা। গেল সোয়া চার বছরে একবারের জন্যও শরিকদের নিয়ে বসেনি জোটের নেতৃত্বদানকারীরা। বরং নানা ইস্যুতে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। ফলে রাজপথে জোটবদ্ধ সব দলই ‘একলা চলো নীতিতে’ চলছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জোটের শরিকরা একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়েও দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগই দূরত্ব সৃষ্টি করেছে দাবি করে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, ‘সোয়া চার বছরে আওয়ামী লীগ কখনো আমাদেরকে ডাকেনি। নির্বাচনের পর মহাজোটের আর কোনো কার্যক্রম নেই। জোটের শীর্ষ দল হিসেবে তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো মূল্যায়ন পাইনি।’ ক্ষোভ ঝাড়লেন ১৪ দলীয় জোটের অংশীদার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সিলেট জেলা শাখার সভাপতি সিকন্দর আলীও। তিনি বলেন, ‘আগে নানা ইস্যুতে সিলেটে ১৪ দল একসঙ্গে বসেছে। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে শরিক দল হিসেবে আমরা মূল্যায়নও পেয়েছি। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর জোটের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো সমন্বয় নেই। সিলেটে নানা ইস্যুতে আমি চেষ্টা করেছিলাম আওয়ামী লীগসহ জোটের সব দলকে নিয়ে বসতে, কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। এতে সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এখন জোটকে আরও সক্রিয় করা না গেলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
তবে শরিকদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব আছে বলে মনে করেন না সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। এরপরও কোনো শরিক দলের নেতারা যদি দূরত্বের বিষয়টি অনুধাবন করে থাকেন তবে তা ঘুচিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ দল বিএনপির ওপরও অখুশি শরিক দল জামায়াত। সিলেট জেলা উত্তর জামায়াতের আমির হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব সৃষ্টির বিষয়টি অস্বীকার করার মতো নয়। গেল সোয়া চার বছরে আমাদের একসঙ্গে বসা হয়নি। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।’আর রাখঢাক না রেখেই জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আমাদের মতো আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছি। জামায়াত ছাড়াই রাজপথে সিলেটে শক্তিশালী অবস্থানে আছে বিএনপি।’