মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

নৌকার মিশনের গলার কাঁটা আওয়ামী লীগের রফিকুল!

সন্দ্বীপ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মিশন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম। যিনি ৫০ বছর ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছেন রফিকুল। রাজনীতির ভাষায় এমন প্রার্থীকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলা হলেও সন্দ্বীপের বাসিন্দারা তা মানতে নারাজ। সন্দ্বীপের একাধিক ভোটারের ভাষ্য- যুদ্ধকালীন সন্দ্বীপের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন রফিকুল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, হরিশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। কিন্তু তিনি মনোনয়ন পাননি। স্থানীয় এমপির আশীর্বাদের কারণে নৌকার টিকিট পেয়েছেন মিশন। গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহানের মৃত্যুতে পদটি খালি হয়। আগামী ২৫ মে এই পদে উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। মিশন ও রফিকুল ছাড়াও নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী ঘরানার আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান বেলাল (দোয়াত) ও জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম (মশাল)। গত ৯ মে থেকে প্রার্থীরা জনসংযোগ, পাড়া বৈঠক, উঠান বৈঠকসহ জোর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাদান, কর্মীদের হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন রফিকুল। তিনি নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন। চিঠিতে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে তার কর্মী-সমর্থকদের প্রচারে বাধাদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অন্য দুই প্রার্থীও অভিন্ন অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চিঠি দিয়েছেন। জানতে চাইলে আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে সন্ত্রাসীরাও কাজ করছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় আমার কর্মী-সমর্থকদের হামলা করছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। প্রচারণায় ব্যবহৃত মাইক, ট্যাক্সি ভাঙচুর করছে। আমরা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে মাঈন উদ্দিন মিশনের কাছে জানতে চাইলে তিনি নির্বাচনী সভায় থাকায় মন্তব্য জানাতে পারেননি। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সব প্রার্থীরা অভিযোগ দিচ্ছেন। প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সব প্রার্থী যাতে প্রচারণা সুষ্ঠু করতে পারেন সে জন্য তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে তফসিল ঘোষণার সময় এই নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করার কথা বলা হলেও এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ব্যালটে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘প্রতিকূল আবহাওয়াসহ কিছু কারণে সন্দ্বীপে ইভিএম মেশিনসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নেওয়ায় কিছুটা ঝুঁকি আছে। কিছু কেন্দ্রে বিদ্যুতের সংকট আছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা থেকেও বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। সে কারণে ব্যালটে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সন্দ্বীপের একাধিক শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর জিতে আসতে হিমশিম খেতে হবে। ইভিএম হলে সেটা সম্ভব ছিল। কিন্তু ব্যালটে ভোট নেওয়ার ফলে সেটা আর সম্ভব হবে না। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা নিজস্ব কায়দায় তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে চাইবেন।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর