রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কলি রানী ও নয়ন মিয়া সমাজের অন্য আর ১০ জনের মতো নয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে বসেছে পরীক্ষার টেবিলে। ওরা দুজনেই অদম্য। দুজনেরই আশা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সমাজের জন্য ভালো কিছু করার। কলি রানী কাউনিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কলি যখন গদাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে তখনই তার বাবা মনোরঞ্জন রায় মারা যান। তারা তিন ভাই তিন বোন। কলি রানী সবার ছোট। মা রুপালি রানী জানান, জন্ম থেকেই তার মেয়ের হাতের আঙুল নেই, কলম ধরতে পারে না। মেয়ের অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ডান পা দিয়ে লেখা শুরু করে। ধীরে ধীরে সে দ্রুত লেখার কৌশল আয়ত্ত করে। সে যখন বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করে তখন তার সহপাঠীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি ও উপহাস করত। বাড়িতে ফিরে সে মন খারাপ করত। পরে শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পায়। পঞ্চম শ্রেণিতে সে এ-গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। কলি জানায়, সে একজন ডাক্তার হতে চায়। যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে। অপরদিকে নয়ন মিয়া এক সময় সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত। কিন্তু ২০১৫ সালে হঠাৎ করেই তার হাত-পায়ের শক্তি কমে যায়। হাত-পা চিকন হয়ে যায় এবং হাঁটা-চলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ একতা বাজার এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেনের ছেলে নয়ন। সে একতা উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। হুইল চেয়ারে যাতায়াত করে স্কুলে। বন্ধুরাই সে চেয়ারে বসিয়ে তাকে প্রতিদিন স্কুল নিয়ে যায় এবং ক্লাস শেষে বাড়িতে রেখে যায়। হুইল চেয়ারে খাওয়া-দাওয়া, পড়ালেখা, এভাবেই চলছে নয়নের জীবন। সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে নয়ন। নাজিরদহ একতা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, নয়ন নিয়মিত স্কুল আসত। শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে পাঠদানসহ খোঁজখবর রাখতেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনোনীতা দাস বলেন, কলি রানীর পরীক্ষা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনে গ্রহণ করা হচ্ছে। নয়ন মিয়ার পরিবার বোর্ড থেকে অনুমতি না নেওয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি।