দেশের ৪৩ শতাংশ মানুষ জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ সমস্যা সমাধানে দেশের ১০ লাখ মানুষকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১০টি শহরে ‘কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস’ প্রকল্পের আওতায় ডায়াবেটিস শনাক্তে মানুষের দোরগোড়ায় যাবে গাড়ি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ ও জাইকার এ যৌথ প্রয়াসে আগামী দুই বছরে লক্ষ্য পূরণে কাজ চলবে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানতে ‘ডায়াবেটিস ম্যাপিং’ নামের অ্যাপটি তৈরি করেছে ডায়াবেটিক সমিতি। গুগল প্লে স্টোরে ‘ডিআরসি’ (ডায়াবেটিস রিস্ক ক্যালকুলেটর বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি নির্ণয়) নামে অ্যাপটি পাওয়া যাচ্ছে। ডায়াবেটিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশের ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ ছাড়া ৪৩ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী জানেন না তারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ডায়াবেটিসের কারণে হার্ট বা কিডনির পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। ডায়াবেটিস ডেকে আনে আরও নানা রোগ। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে হৃদরোগ, কিডনি বিকল হওয়া, অন্ধত্ব, পা কেটে ফেলা, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. বিশ্বজিত ভৌমিক বলেন, কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস প্রকল্পের আওতায় আগামী আগস্ট মাস থেকে দেশের আটটি বিভাগীয় শহর এবং গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজার শহরে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে যাবে একটি করে গাড়ি। মোবাইল ডায়াবেটিস সেন্টার-নামের এই গাড়িতে ডায়াবেটিস ছাড়াও চোখ, দাঁত, আল্ট্রাসনোগ্রাম, লিপিড প্রোফাইলসহ বেশকিছু টেস্ট ফ্রিতে করা হবে। যাদের ডায়াবেটিস শনাক্ত হবে তাদের মেডিকেল কলেজ, ডায়াবেটিক সমিতি বা কাছের হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ডায়াবেটিসের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি ছয় গুণ, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দুই-তিন গুণ, অন্ধত্বের ঝুঁকি ২৫ গুণ, কিডনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি পাঁচ গুণ ও পা কেটে ফেলার ঝুঁকি ২০ গুণ বেড়ে যায়। শুরুতে ডায়াবেটিস শনাক্ত হলেও তা নিয়ন্ত্রণে থাকলে অকাল মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চায় না। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মানুষের কাছে যাব। যেখানে রিসোর্স নেই, ফ্যাসিলিটি নেই সেখানে মানুষের দোরগোড়ায় যাবে এ গাড়ি। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানিয়ে দেবে অ্যাপ। এ প্রকল্পের আওতায় ‘ডিআরসি’ (ডায়াবেটিস রিস্ক ক্যালকুলেটর) নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপটি রক্ত পরীক্ষা ছাড়াই বলে দেবে কোনো ব্যক্তি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন কি না। নিবন্ধনকারীর ওজন কত হওয়া উচিত এবং সেই অনুপাতে তাকে দিনে কত ক্যালরি খাবার খেতে হবে তাও বলা আছে অ্যাপে। অ্যাপে বিনামূল্যে নিবন্ধনকারীর উপযোগী ডায়েট চার্ট দেওয়া আছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে কত মানুষ ডায়াবেটিসের ঝুঁঁকিতে আছে, কতজন আক্রান্ত, কতজন চিকিৎসা পাচ্ছেন, কত সংখ্যকের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কত সংখ্যকের অন্য জটিলতা দেখা দিয়েছে, সে সম্পর্কে তথ্য থাকবে। ফলে অ্যাপটি ডায়াবেটিস নজরদারির পদ্ধতি তৈরিতেও সহায়তা করবে।