শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
বরিশাল

মেয়র প্রার্থীদের গণসংযোগ ব্যস্ত কাউন্সিলর প্রার্থীরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

মেয়র প্রার্থীদের গণসংযোগ ব্যস্ত কাউন্সিলর প্রার্থীরাও

সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রধান তিন মেয়র প্রার্থী। নতুন বরিশাল গড়ার মাধ্যমে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। এদিকে উৎপাদনমুখী বরিশাল নগরী বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস। অন্যদিকে নৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। গতকাল সকালে কালুশাহ সড়কের বাসায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। দুপুরে নগরীর বগুড়া রোডের একটি কনভেনশন সেন্টারে জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম গতকাল মসজিদভিত্তিক তিনটি নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন। গতকাল নগরীর ভাটিখানা জোড় মসজিদে আসর, কাশীপুর চৌমাথা জামে মসজিদে মাগরিব এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী ইসরাইল ঈদগাহ মসজিদে এশার নামাজ আদায় করেন তিনি। এদিকে বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারাও দিনভর মাঠ চষে বেড়াছেন

এ সময় তিনি বলেন, বরিশাল নগরী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। বরিশালের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের নৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, সহজ শর্তে বাড়ির প্ল্যান, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস গতকাল সকালে নিজ বাসায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে তিনি জেলখানা মোড়, হাসপাতাল রোড ও নতুনবাজার এলাকায় গণসংযোগ এবং অমৃত লাল দে কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে বরিশালকে আইটি সিটি হিসেবে গড়ে তুলব। আইটির মাধ্যমে তরুণ ও বেকার যুবসমাজের অনেক কর্মসংস্থান হবে। বরিশাল হবে একটি আধুনিক ও উৎপাদনমুখী নগরী।’ এই লক্ষ্য পূরণে ১২ জুন লাঙ্গলে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তাপস। সন্ধ্যায় নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিউটি রোডে গণসংযোগ করে একই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করেন তিনি।

২১ জনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত সাধারণ ওয়ার্ডে ২১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। মেয়র বা সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। এর আগে বাছাইকালে মো. আসাদুজ্জামান নামে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলেও আপিল কমিটির বিবেচনায় গতকাল প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে মেয়র প্রার্থী মোট সাতজন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও জাকের পার্টির চারজন ছাড়াও অপর তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপণ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন হাওলাদার ও মো. আসাদুজ্জামান। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪২ জন। এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন একমাত্র রফিকুল ইসলাম খোকন নামে একজন প্রার্থী। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আজ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।

আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা আজ : বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে আজ। বেলা ৩টায় জেলার গৌরনদী পৌরসভা প্রাঙ্গণে এই সভা আহ্বান করেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির টিম লিডার ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। তবে বরিশাল সিটিতে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত এবং মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থীর পক্ষে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবে। আমরা আশা করি তিনি (নৌকার প্রার্থী) বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকবেন।’ ওই সভায় তিনি নাও যেতে পারেন- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে তালুকদার ইউনুস বলেন, তিনি আসতেও পারেন। মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকবেন কি না জানতে চাইলে তালুকদার ইউনুস বলেন, ‘না।’

মাঠে আছে বিএনপি : দলীয় হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে বরিশাল সিটি নির্বাচনের মাঠে আছেন বিএনপির পদবিধারী তিন নেতাসহ সাতজন কাউন্সিলর প্রার্থী। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন পাঁচজন।

গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত ১ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ সাইদুল হক মামুন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মাইনুল হক, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে আনম সাইফুল আহসান আজিম ও হাবিবুল্লাহ এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে জিয়াউর রহমান জিয়া মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে রয়েছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য মো. সেলিম হাওলাদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একই কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক হারুন-অর রশিদ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন এবং সংরক্ষিত তিনটি ওয়ার্ডে জাহানারা বেগম, সেলিনা বেগম ও রাশিদা বেগম।

দলীয় হুমকি উপেক্ষা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, ‘এলাকার মানুষের চাপে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব।’

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের বিষয়ে দলের হাইকমান্ডকে জানাব। দল তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর