শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে প্রতারণায় জড়াচ্ছেন নাইজেরিয়ানরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, উচ্চবিত্ত শ্রেণিসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলত নাইজেরিয়ান সদস্যরা। পরে বিদেশি পার্সেলের লোভ দেখিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করত। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানায় এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা হলেন- নাইজেরিয়ান নাগরিক চার্লস ইফানাডি ও ফ্র্যাঙ্ক কোকো এবং চক্রের বাংলাদেশি সদস্য শফি মোল্লা ও মোছা. মৌসুমি খাতুন। তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত আটটি মোবাইল ফোন ও ভুয়া ইনভয়েস জব্দ করা হয়। র‌্যাব বলেছে, দেশে ২ হাজারের মতো নাইজেরিয়ান আছে। এদের ৫০ শতাংশ অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এ চক্রের সদস্যরা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর নিজেদের তারা পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে জাহির করত।

 পরে পরস্পরের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় করার জন্য উপহারের কথা বলত। ভুক্তভোগী অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তারা উপহারের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ফেলত। এর ধারাবাহিকতায় চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভুক্তভোগীকে ফোন করত। ভুক্তভোগী ব্যক্তি বন্ধুত্বের মান রক্ষায় ওই পার্সেল নিতে চাইলে তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য হতো। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব জানতে পারে, প্রতারক চক্রের বিদেশি সদস্যরা ভ্রমণ ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশা শুরু করে। এর আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। আটক চার্লস ইফানাডির নামে মামলা রয়েছে। মৌসুমি ও শফি আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বাংলাদেশি সদস্য। মূলত তাদের মাধ্যমেই এ প্রতারক চক্রের বিদেশি সদস্যরা ভিকটিম সংগ্রহ, বন্ধুত্ব স্থাপন, কাস্টমস অফিসার পরিচয় এবং শেষে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল। র‌্যাব কর্মকর্তা ফরিদ বলেন, চার্লস ইফানাডি ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। মাদক মামলায় তার পাসপোর্ট কোর্ট জব্দ করেছেন। পরে তিনি পালিয়ে গিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। বাংলাদেশ থেকে কাপড় কিনে নাইজেরিয়ায় রপ্তানি করতেন। বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেও পরিচয় দেন। তিনিই আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূল হোতা। কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে তিনি এসব কর্মকান্ড করতেন। তার চক্রের সদস্য ফ্র্যাঙ্ক কোকো ২০২১ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। এরপর চার্লস ইফানাডির সঙ্গে পরিচয় হয়। তার সঙ্গে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন কোকো। তিনিও নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন। তিনি চার্লসের প্রধান সহযোগী। অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা এমন পাঁচজন ভুক্তভোগী পেয়েছি। চারজন ঢাকার, একজন ফেনীর। মূলত লোভের কারণে তারা প্রতারিত হয়েছেন। এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে কোনো ধরনের প্রলোভনে না পড়ার অনুরোধ করেন র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর