চট্টগ্রামে সরকারি ভর্তুকির কৃষিযন্ত্র বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত কৃষককে কৃষি যন্ত্রপাতি না দিয়ে ভর্তুকি মূল্যের এসব যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে কৃষির সঙ্গে জড়িত নয় এমন ব্যবসায়ীদের। এসব যন্ত্রপাতি কথিত কৃষকেরা চড়া দামে ভাড়া দিচ্ছেন। এক ব্যবসায়ী নিজে নেওয়ার পাশাপাশি তার দোকানের কর্মচারীর নামেও কৃষিযন্ত্র নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, কৃষক এবং কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এসব যন্ত্রপাতি পাবে। এটা বড় মেশিন, এটা দিয়ে কাজ করতে হবে। যদি কেউ কৃষক না হয়েই এ যন্ত্রপাতি নেয় তবে তা আমাদের জানাতে পারেন। তবে কৃষি গ্রুপের সদস্যরাও নিতে পারবে। মূল লক্ষ্য এটা কৃষকের উপকারে আসলেই হলো। এ ছাড়াও এটা দেওয়ার আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা কৃষি অফিস যাছাই করে তা দিচ্ছে।
জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের মহানগর গ্রামের বাসিন্দা মামুন হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী। কৃষক বা কৃষি জমি না থাকলেও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে তিনি পেয়েছেন সরকারি ৭০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যের দুটি কৃষিযন্ত্র। কৃষি কার্ড বানিয়ে এসব যন্ত্র নিয়ে এলাকায় চড়া দামে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। মূলত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদেই মামুনকে দুটি কৃষিযন্ত্র দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রভাব খাটিয়ে মামুন হোসেন নিজের নামে একটি ট্রাক্টর ও নিজ দোকানের কর্মচারী সাইফুল ইসলামের নামে একটি পাউয়ার থ্রেসার (ধান মাড়াই কল) নিয়েছেন।
সীতাকুণ্ড কৃষি অফিসারের কার্যালয় থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭০ শতাংশ সরকারি ভর্তুকিতে বিতরণকৃত তালিকায় দেখা যায়, সৈয়দপুরের হাজারীহাটের মো. মহিউদ্দিন ও বড় দারোগারহাটের আবদুল আলিম পেয়েছেন একটি করে পাউয়ার থ্রেসার। মহিউদ্দিনের পাউয়ার থ্রেসারটি নেই তার কাছে। মহিউদ্দীন জানান, কৃষি অফিস থেকে দেওয়া যন্ত্রটি তিনি অন্য এলাকায় ভাড়া দিয়েছেন। অপরদিকে আবদুল আলিমের নামে বরাদ্দকৃত পাউয়ার থ্রেসার শুরু থেকেই তার নিয়ন্ত্রণে নেই। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়ে সেটি মহিউদ্দিনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, মো. মহিউদ্দিন একজন ধান মাড়াইকল ব্যবসায়ী। তার মালিকানায় অন্ততপক্ষে ৫টি ধান মাড়াইকল রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ভর্তুকি মূল্যে নিয়েছেন আরও দুটি। যেগুলো তিনি এলাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। কৃষক না হয়েও একাধিক কৃষিযন্ত্রের মালিককে নিয়ম লঙ্ঘন করে ভর্র্তুকির কৃষিযন্ত্র বরাদ্দ দেওয়ায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে প্রকৃত কৃষকের মাঝে।
সরকারি ভর্তুকির এসব কৃষিযন্ত্র উপকূলীয় এলাকা হিসেবে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে সীতাকুণ্ড উপজেলায়। তবে এসব যন্ত্রপাতি পাননি কৃষকরা। পাউয়ার থ্রেসারে কৃষকরা জমা দিয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু যন্ত্র মূল্য ধরা হয়েছে তার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। সেই হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে যন্ত্র মূল্যের ৭০ শতাংশ ভর্তুকি না দিয়ে আরও ৩০ হাজার টাকা বেশি আদায় করা হয়েছে। শুধু তাই নয় কৃষি যন্ত্র বিতরণের সময় যন্ত্রের কাগজপত্র কৃষককে বুঝিয়ে দেননি উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। বেশিরভাগ কৃষি যন্ত্রের ইঞ্জিন, চেসিস, মডেল নম্বর, কৃষকের মুঠোফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর মিলেনি।