চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগানো যেন নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। বনিবনা না হলেই তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়, অচল করে দেওয়া হয় পুরো ক্যাম্পাস। বিশেষ করে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিংয়ের রেশ ধরে এক গ্রুপের ওপর চড়াও হয়ে আরেক গ্রুপ তালা লাগিয়ে অচল করে দেয় ক্যাম্পাস। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে প্রধান ফটকে তালা লাগানোর পেছনে দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থই যেন মুখ্য। আর এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কঠোর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাসে কখন কী হয় তা নিয়ে সব সময় শঙ্কায় দিন পার করতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পান থেকে চুন খসলেই তালা লাগে প্রধান ফটকে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের, ব্যাহত হয় প্রশাসনিক কার্যক্রম। এখন ছাত্রলীগের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এ কৌশলে আন্দোলন করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। চবি প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর না হলে ভবিষ্যতে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হলেও তালা লেগে যাবে প্রধান ফটকে। যদিও গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান ফটকে তালা দিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। অথচ এ পর্যন্ত ফটক অবরোধ নিয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ছাত্রনেতা যারা হচ্ছেন তাদের কি কোনো আদর্শ আছে? তারা এখন ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করছেন। নার্সিংয়ের অভাবে অযোগ্য, পকেটমার আর ছিনতাইকারীরা নেতৃত্বে আসছেন। যার কারণে যা হওয়ার সেটাই হচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আছেন তারা কি যোগ্য? অযোগ্য ভিসি-প্রো-ভিসির কারণে এসব বাড়ছে। এ সবকিছু তদারকিহীনতার ফসল।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে চবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ছাত্রলীগের একটি অংশ। ২১ জুলাই তাকে ক্যাম্পাসে দেখেই ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের উপগ্রুপের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে কোনো কিছু করতে না পেরে ওই অংশটি চবির প্রধান ফটক আটকে দিয়ে আন্দোলন শুরু করে। ১ জুন ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আইইআর ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার অনুমতি না দেওয়ায় ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্লাসে অনিয়মিত থাকায় তাকে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ২০২২ সালের ১ জুন ছাত্রলীগের উপগ্রুপের দুই নেতার ওপর শাটলে হামলার অভিযোগে এনে ফটকে তালা দেয় ছাত্রলীগের একাংশ। ফটকের সামনে আগুন জ্বালিয়ে আন্দোলন করে তারা। শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার পরপরই প্রধান ফটক অবরোধ করেন নেতা-কর্মীরা। গত বছরের ৩০ জুলাই ঘোষিত কমিটিতে পদবাণিজ্য ও অছাত্রদের রাখার অভিযোগ এনে ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ- অবরোধ করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। একই ইস্যুতে ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়ার দাবিতে ফটক অবরোধ করে আন্দোলন করেন তারা।
এর আগে ১৭ মে ক্যাম্পাসে রিকশা, সিএনজি ও বাসের ভাড়া এবং খাবারের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধির প্রতিবাদে মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে শাখা ছাত্রলীগের একাংশ। গত বছরের ১১ এপ্রিল তিন শিক্ষার্থীকে সিএনজিচালক কর্তৃক মারধরের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দেয় ছাত্রলীগের বিজয় ও সিএফসি গ্রুপ। এর আগে গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বন্ধ হয়ে যাওয়া পাঁচ জোড়া শাটল ট্রেন পুনরায় চালু করার দাবিতে মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এতেও সক্রিয় ছিল ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপ।