মৌসুম এগিয়ে আসতেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে এডিস মশা নিয়ে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৮ ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। রাজধানীর প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িতে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। বর্ষা-পূর্ববর্তী জরিপে পাওয়া মশার এ উপস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বর্ষা-পরবর্তী জরিপের তথ্যে বলা হয়, জরিপে লার্ভা পাওয়া মোট বাড়ির মধ্যে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবন। ২১ দশমিক ৬ শতাংশ স্বতন্ত্র ভবন, ২১ দশমিক ৬ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবন, ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ সেমিপাকা বাড়ি এবং ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ খালি জায়গা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮ ও দক্ষিণ সিটির ১০ ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ২০-এর বেশি। সে হিসেবে ওইসব ওয়ার্ডে এডিস মশার উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স সবচেয়ে বেশি ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চামেলীবাগ, রাজারবাগ, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, শান্তিনগর নিয়ে এ ওয়ার্ড গঠিত। এ ছাড়া ডিএসসিসির ৪, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। উত্তর সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শাহ আলীবাগ, টোলারবাগ, পাইকপাড়া ও দক্ষিণ বিশিল এলাকা নিয়ে এ ওয়ার্ড গঠিত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শ্যামল কুমার দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জরিপে রাজধানীর কোন জায়গাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ তা আমরা তুলে ধরি। যাতে সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থা ও নগরবাসী সমন্বিতভাবে সমস্যা সমাধানে নজর দিতে পারে। আমরা এবার বহুতল ভবনে বেশি মশার লার্ভা পেয়েছি। যে কোনো সংস্থার পক্ষে একা এটা সমাধান করা কঠিন। এজন্য সবার সচেতনতা প্রয়োজন।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ডেঙ্গুজ্বরে রেকর্ড পরিমাণ রোগী আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গু রোগে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯। এর মধ্যে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ অন্য সময়ের চেয়ে বেশি হতে পারে। এবারের জরিপ করা হয়েছে এপ্রিলে। শুকনো মৌসুমে মশার ঘনত্ব কম থাকে। ২০২৩ সালের জরিপ করা হয় জুনে, বর্ষা মৌসুমের জরিপেই এখনকার চেয়ে কম মশা ছিল। সে হিসেবে মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এবার মশা বেশি থাকবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতিও আগের চেয়ে খারাপ হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। মশার বংশবিস্তারের উৎসে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।’ ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কর্মসূচির পাশাপাশি মাসব্যাপী ক্রাশ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করা হয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মশার ওষুধ বিটিআই ডিএনসিসির হাতে এসে পৌঁছাবে। জনগণ সচেতন হলে সবাই মিলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।’