ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ও ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়ায় পদ্মা নদীতে চালু ছিল একটি নৌ রুট। ৫৯ বছর পর নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় আবার এই নৌ রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। সে অনুযায়ী পরীক্ষামূলক পাঁচটি নৌযানে পণ্য আনা-নেওয়াও করা হয়। কিন্তু এখন বন্ধ রয়েছে নৌ রুট। এতে করে হতাশ রাজশাহী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অর্থনৈতিক কোড সৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ নৌ রুট পুরোপুরি চালু হচ্ছে না। এ সমস্যার সমাধানে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এর পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান নৌ শুল্ক স্টেশনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেছেন। তিনি দুটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, এনবিআর সদস্য নিজেও এই নৌ রুট পুরোপুরি চালু করতে আগ্রহী। কিন্তু তিনি দুটি সমস্যার কথা বলেছেন। এর একটি হলো এখানে অবকাঠামোগত সমস্যা আছে। বিআইডব্লিউটিএ যে একটা ঘর বানিয়েছে, সেটা আসলে পোর্টের কাজে ব্যবহার হওয়ার মতো ঘর নয়। এটার উন্নয়ন দরকার, সীমানা প্রাচীর দরকার। আর এখানে নিরাপত্তার সংকট আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নৌপথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নদীর পাড় থেকে ভারতের ময়ার দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের কম।
এ পথে ভারত থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করলে খরচ অনেক কমবে। এখন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর ব্যবহার করে থাকেন। নৌপথে এলে স্থলবন্দরের চেয়ে ৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাও অনেক কমে যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এনবিআরের সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান সুলতানগঞ্জ ঘাট পরিদর্শনে এলে তার সঙ্গে মাসুদুর রহমান রিংকু ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবদুল আওয়াল এবং সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্যও ছিলেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা এনবিআর সদস্যকে বলেছেন, ভারতের মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘি থানার ধুলিয়ান ময়াঘাট এবং গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত নদীপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কমবে। তারা ভারত থেকে পণ্য এনে সুলতানগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে ডিউটি পরিশোধের পর ওই নৌযানেই পণ্য নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন। এতে সড়কপথের ওপর চাপ কমবে, খরচও কমবে। এনবিআর বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের পণ্য ভারতে পাঠানোর অনুমোদন দিলেও ভারত শুধু কয়লা ও পাথর আমদানির সুযোগ দিয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা এ সীমাবদ্ধতা উঠিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন এনবিআর সদস্যের কাছে।